চোখে আঞ্জনি, কারণ, প্রতিকার ও সতর্কতা – যা জানা জরুরি

চোখে আঞ্জনি (Stye) একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। চোখের পাপড়ির গোড়ায় লালচে ফোলা, ব্যথা এবং কখনো কখনো পুঁজ বা জল বেরোনো – এই সবই আঞ্জনির লক্ষণ। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, যা চোখের দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটায়।

আঞ্জনি কেন হয়?
চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, আঞ্জনি মূলত Staphylococcus aureus নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। এই সংক্রমণ চোখের পাপড়ির গোড়ায় থাকা তেল গ্রন্থি (sebaceous glands) বা আশপাশের চুলের ফলিকলকে আক্রান্ত করে। আঞ্জনি হওয়ার কিছু সাধারণ কারণগুলো হলো:

অপরিষ্কার হাত: ময়লা হাতে চোখে হাত দেওয়া বা চোখ ঘষা।

মেকআপ: পুরনো বা অপরিষ্কার আই মেকআপ ব্যবহার করা।

কন্ট্যাক্ট লেন্স: অপরিষ্কারভাবে কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করা।

ব্লেফারাইটিস: চোখের পাতার প্রদাহ (ব্লেফারাইটিস) থাকলে আঞ্জনি হতে পারে।

ধুলো-জীবাণু: চোখে ধুলো বা জীবাণু প্রবেশ করলে।

শারীরিক অবস্থা: ডায়াবেটিস বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের আঞ্জনি হওয়ার প্রবণতা বেশি।

আঞ্জনি হলে কী করবেন?

গরম সেঁক: দিনে ৩-৪ বার ১০ মিনিট করে কুসুম গরম জলে ভেজানো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখে সেঁক দিন। এটি রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা কমায় এবং পুঁজ দ্রুত বের হতে সাহায্য করে।

চোখ পরিষ্কার রাখা: হালকা স্যালাইন ওয়াটার বা অ্যান্টিসেপ্টিক ওয়াইপ দিয়ে চোখের চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

ব্যথা কমানো: যদি যন্ত্রণা তীব্র হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

মেকআপ বর্জন: আঞ্জনি সম্পূর্ণ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত যেকোনো ধরনের আই মেকআপ ব্যবহার বন্ধ রাখুন।

প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক: যদি সংক্রমণ গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চক্ষু বিশেষজ্ঞ অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।

ভুলেও যা করবেন না:

চেপে ধরা বা ফাটানো: ভুলেও আঞ্জনি চেপে ধরবেন না বা পুঁজ বের করার চেষ্টা করবেন না। এতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

ময়লা হাতে চোখ: অপরিষ্কার হাতে চোখে হাত দেবেন না বা চোখ ঘষাঘষি করবেন না।

কন্ট্যাক্ট লেন্স: সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করবেন না।

ব্যক্তিগত সামগ্রী: অন্যদের তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। নিজের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ব্যবহার করুন।

একটু সচেতনতা এবং সঠিক নিয়ম মেনে চললে আঞ্জনির সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। যদি ঘন ঘন আঞ্জনি হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যা না কমে, তবে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।