৪ বছর ধরে রয়েছেন অপেক্ষায়, টিম ইন্ডিয়ার হয়ে কবে খেলবেন বাংলার এই ক্রিকেটার?

ভারতীয় টেস্ট দলের দরজা যেন অভিমন্যু ঈশ্বরণের জন্য খুলতেই চাইছে না। ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে গেলেও, বাংলার এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার এখনো পর্যন্ত জাতীয় দলের নীল জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ পাননি। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মতো মহাতারকারা থাকাকালীন হয়তো শীর্ষ সারিতে জায়গা করে নেওয়া কঠিন ছিল, কিন্তু তাদের অবসরের পরও যখন ভারতীয় টপ অর্ডারে অভিমন্যুর জায়গা হচ্ছে না, তখন বাংলার ক্রিকেট মহল থেকে বারবার বিস্ময় প্রকাশ করা হচ্ছে।

গত চার বছরে, ভারতীয় টেস্ট দলে মোট ১৬ জন নতুন খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছে, কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরণের অপেক্ষার পালা যেন শেষ হওয়ার নয়। সম্প্রতি ম্যানচেস্টার টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাস্ট বোলার আনশুল কাম্বোজ, যিনি মাত্র কয়েকদিন আগেই দলে যোগ দিয়েছেন, তারও টেস্ট অভিষেক হয়েছে। আনশুল ছাড়াও, শ্রেয়াস আইয়ার, কেএস ভরত, সূর্যকুমার যাদব, যশস্বী জয়সওয়াল, ইশান কিষাণ, মুকেশ কুমার, প্রসিদ কৃষ্ণ, রজত পতিদার, সরফরাজ খান, ধ্রুব জুরেল, আকাশ দীপ, দেবদত্ত পাডিক্কল, নীতীশ কুমার রেড্ডি, হর্ষিত রানা এবং সাই সুদর্শনও এই সময়ের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেছেন। এই তালিকা আরও দীর্ঘ, যা অভিমন্যুর সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি আরও প্রকট করে তুলেছে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত রেকর্ড: উপেক্ষিত এক প্রতিভা
অভিমন্যু ঈশ্বরণের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের পরিসংখ্যান রীতিমতো ঈর্ষণীয়। এখনো পর্যন্ত তিনি ১০৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন এবং ৭৮৪১ রান সংগ্রহ করেছেন, যার গড় ৪৮.৭০। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৭টি সেঞ্চুরি এবং ৩১টি হাফ সেঞ্চুরি। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও তার রেকর্ড উজ্জ্বল; ৮৯টি ম্যাচে ৪৭.০৩ গড়ে করেছেন ৩৮৫৭ রান, যেখানে ৯টি সেঞ্চুরি এবং ২৩টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। এমনকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও অভিমন্যু ৩৪টি ম্যাচে ৩৭.৫৩ গড়ে ৯৭৩ রান করেছেন, যার মধ্যে একটি সেঞ্চুরি এবং ৫টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে।

সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ধারাবাহিকতা
সম্প্রতি ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া-এ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ। দুটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচেই তিনি অর্ধশতক হাঁকিয়ে নিজের ফর্ম এবং ধারাবাহিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজে তাকে আবারো উপেক্ষা করা হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের এই অসাধারণ পরিসংখ্যানগুলো নিঃসন্দেহে অভিমন্যুর যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রতিফলন ঘটায়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলমান টেস্ট সিরিজে ৩ নম্বরে অভিমন্যু একজন দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারতেন বলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিন্তু করুণ নায়ার এবং সাই সুদর্শনকে তার চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এই ধারাবাহিক উপেক্ষা বাংলার ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠছে, আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে? ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও যদি জাতীয় দলের দরজা না খোলে, তবে দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে কী বার্তা যাবে? ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকদের সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার মূল্যায়নের বিষয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।