কলকাতার ব্যর্থতা? নিকাশি নালায় বর্জ্য ফেলার অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ

সম্প্রতি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির জলমগ্ন শহরের ছবি পোস্ট করে নিজের পুরসভার সাফল্য তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এবার নিকাশি ব্যবস্থায় কড়া পদক্ষেপের ক্ষেত্রে সেই গুরুগ্রামের কাছেই পিছিয়ে পড়ছে কলকাতা পুরনিগম, এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। গুরুগ্রাম পুরনিগমের নতুন নিয়মে নিকাশি নালায় আবর্জনা ফেলাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, অথচ কলকাতায় একই সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
গুরুগ্রামের কড়া পদক্ষেপ:
গুরুগ্রাম কর্পোরেশনের কমিশনার সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, নিকাশি নালায় আবর্জনা ফেলা হলে তা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। এই পদক্ষেপের মূল কারণ, সেখানকার পুরকর্মীরা নিকাশি পরিষ্কার করার সময় দেখেছেন যে, পলিথিন, প্লাস্টিক, কংক্রিট, কাঠের মতো অপচনশীল কঠিন বর্জ্য ফেলে নিকাশি ব্যবস্থা অচল করে দেওয়া হচ্ছে। তাই নাগরিকদের সচেতন করার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কলকাতার করুণ চিত্র:
অন্যদিকে, কলকাতা পুরনিগমের গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর, বেহালা, তপসিয়া, রাজাবাজার-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে একই ধরনের সমস্যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। বাসিন্দারা নিকাশি নালায় যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে দেন, যার ফলে নালা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পুরনিগমকে জনগণের করের বিপুল টাকা খরচ করে বারবার সেই নালা পরিষ্কার করতে হয়। অভিযোগ, এই ধরনের কাজ করা সত্ত্বেও পুরনিগম কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয় না।
বিরোধীদের কটাক্ষ:
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ এই প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “মেয়র ডাবল ইঞ্জিন সরকারের শহর নিয়ে টুইট করেন, কিন্তু নিজের শহরে একই সমস্যা থাকলে রাজনৈতিক কারণে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। রাজাবাজার, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকাগুলি ফিরহাদ হাকিমের ভোটব্যাঙ্ক। সেই ভোটব্যাঙ্কে আঘাত লাগার ভয়ে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এর ফলে জনগণের করের টাকা অপচয় হচ্ছে।” সজল ঘোষের দাবি, যেখানে বিজেপি সরকার আইনি পদক্ষেপ নিতে পিছপা হয় না, সেখানে রাজ্যের শাসক দল ভোটব্যাঙ্ক হারানোর ভয়ে পিছিয়ে আসে।
প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা:
কলকাতা পুরনিগমের একজন আধিকারিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, “আমরা একাধিকবার বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু মানুষের হুঁশ ফেরেনি। নিজেরা সমস্যা তৈরি করে আবার সমাধানের জন্য আমাদের কাছে আসেন।” যদিও আইন থাকা সত্ত্বেও কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গুরুগ্রামের এই নতুন নিয়ম এবং কলকাতার নিকাশি সমস্যার প্রতি পুর প্রশাসনের উদাসীনতা শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।