আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা, ব্রিটিশ পরিবারকে ভুল দেহাবশেষ সরবরাহের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ যুক্তরাজ্য

আহমেদাবাদের এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহাবশেষ শনাক্তকরণ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দুটি ব্রিটিশ পরিবার দাবি করেছে যে তাদের প্রিয়জনদের পরিবর্তে ভুল দেহাবশেষ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি পরিবার শেষকৃত্য স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে, এবং আরেকটি পরিবার কফিনের মধ্যে বিভিন্ন দেহের অংশ খুঁজে পেয়েছে, যা তাদের মধ্যে গভীর মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ভারতে সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পশ্চিম লন্ডনের অভ্যন্তরীণ করোনার ডাঃ ফিওনা উইলকক্স যখন প্রত্যাবাসিত ব্রিটিশ নিহতদের ডিএনএ নমুনা তাদের পরিবারের দেওয়া নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করতে শুরু করেন, তখনই এই বিভ্রান্তি সামনে আসে। বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী বিমান চলাচল বিষয়ক আইনজীবী জেমস হিলি-প্র্যাট জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কিছুকে ভারতেই সমাহিত করা হলেও, অন্তত ১২ জনের দেহাবশেষ যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
হিলি-প্র্যাট ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘ডেইলি মেইল’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “গত এক মাস ধরে আমি অনেক শোকাহত ব্রিটিশ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রিয়জনদের দেহাবশেষ ফিরে পাওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কিছু ক্ষেত্রে তারা ভুল দেহাবশেষ পেয়েছে, যা তাদের গভীর মানসিক আঘাত দিয়েছে। এই সমস্যাটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে এবং এই পরিবারগুলির এর উত্তর পাওয়ার অধিকার আছে।”
তিনি আরও জানান, একটি পরিবার মিশ্র দেহাবশেষ পেলেও, পরবর্তীতে সেগুলো আলাদা করে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে অন্য একটি পরিবারকে দেওয়া কফিনে সম্পূর্ণ ভিন্ন দেহের অংশ ছিল, যার ফলে তারা এখনো তাদের প্রিয়জনের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পারেনি। হিলি-প্র্যাট প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি কফিনে তাদের আত্মীয় না থাকে, তাহলে কার দেহাবশেষ আছে? এর মানে সম্ভবত অন্য যাত্রীর দেহাবশেষও ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে, যার ফলে একাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
এয়ার ইন্ডিয়া এবং ডিজিসিএ-র বক্তব্য
এদিকে, এয়ার ইন্ডিয়া মঙ্গলবার একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে তারা তাদের বহরের সমস্ত বোয়িং ৭৮৭ এবং বোয়িং ৭৩৭ বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ (FCS)-এর লকিং প্রক্রিয়া পরীক্ষা করেছে এবং তাতে কোনো সমস্যা খুঁজে পায়নি। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বহরের অংশ বোয়িং ৭৩৭ বিমানগুলির ক্ষেত্রেও একই পরিদর্শন করা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া ১২ জুলাই স্বেচ্ছাসেবী পরিদর্শন শুরু করে এবং ডিজিসিএ-র নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা সম্পন্ন করে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মোহন সোমবার সংসদে জানান, গত মাসে আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া AI171 বিমানের ক্ষেত্রে গত ছয় মাসে কোনো প্রতিকূল নিরাপত্তা প্রবণতা চিহ্নিত বা রিপোর্ট করা হয়নি। রাজ্যসভার সাংসদ জন ব্রিটাসের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, “বিগত ছয় মাসে বিধ্বস্ত বিমানটির ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়ার নির্ভরযোগ্যতা প্রতিবেদনে কোনো প্রতিকূল প্রবণতা দেখা যায়নি।” তবে মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, গত ছয় মাসে পাঁচটি চিহ্নিত নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়াকে মোট নয়টি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্ত এখনো চলছে। তবে ভুল দেহাবশেষ সরবরাহের এই গুরুতর অভিযোগ নতুন করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।