চিনে ঘন ঘন যাতায়াত করছে বাংলাদেশের জামাত নেতারা, ভারত-বিরোধী যোগসাজেশ নয়তো?

ঢাকা ও বেজিংয়ের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে বাংলাদেশের কট্টর ইসলামপন্থী দল জামাতে ইসলামির ঘন ঘন চিন সফর। দলটির শীর্ষ নেতা শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি চিনে গিয়েছে, যা এক মাসের মধ্যে তাদের দ্বিতীয় বারের সফর। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন ও জামাতের ক্রমবর্ধমান সখ্যতা কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কারণ, জামাত ইসলামি দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। চিনের সঙ্গে তাদের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সেই মনোভাবকে আরও মদত দিতে পারে।
চিনে জামাত নেতাদের বারবার আমন্ত্রণ
এর আগেও ঢাকায় অবস্থিত চিনা দূতাবাস জামাত নেতাদের একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এবার সরাসরি চিন সফর। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলির দাবি, চিন জামাতকে একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ভারত-বিরোধী এজেন্ডা চালানোর জন্য। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক কিংবা বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
নির্বাচনী রাজনীতিতে জামাতের প্রত্যাবর্তন
গত বছর পর্যন্ত সন্ত্রাস ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে জামাত ইসলামিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার তাদের উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। বর্তমানে দলটি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক সভা করছে এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
১৯ জুলাই ঢাকায় আয়োজিত এক সভায় জামাত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, আগামী সরকার ও সংসদকে ইসলামী শাসনব্যবস্থার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে হবে। তারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে ইসলামিক আইন মেনে দেশ পরিচালনার জন্য।
দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদের নতুন রূপ?
বিশ্লেষকদের মতে, জামাতের এই পুনরুত্থান এবং চিনের সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিকে একত্রিত করে একটি বড় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে, যার ফলে গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বিশেষ করে ভারতের জন্য বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জামাতের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা ভবিষ্যতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি জামাত ও চিনের কার্যকলাপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
কূটনৈতিক সংকেত
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। সম্ভাব্যভাবে নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নীরব সমর্থনেই জামাত তার রাজনৈতিক পরিসর বাড়িয়ে নিচ্ছে এবং সেই সঙ্গে চিনও ক্রমশ সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নিচ্ছে।
পরিস্থিতি যে কোনও সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।