বিশেষ: আগ্নেয়গিরির ওপর রয়েছে গোটা গ্রাম, দীর্ঘদিন ধরে এতেই বাস করছে মানুষ! জেনেনিন কোথায়?

পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন সব অদ্ভুত গ্রাম, যার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য তাদের বিশ্বের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে তুলেছে। এমনই একটি রহস্যময় এবং অবিশ্বাস্য গ্রাম হলো জাপানের আওগাশিমা, যা ফিলিপাইন সাগরের বুকে এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উপরেই টিকে আছে। এই গ্রামকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘সাহসী’ গ্রাম হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের টোকিও থেকে ৩৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই আওগাশিমা গ্রামটি সত্যিই এক অদ্ভুতুড়ে সৌন্দর্যের অধিকারী। মাত্র ৬ বর্গ কিলোমিটারেরও কম আয়তনের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি আসলে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত, যদিও বর্তমানে এটি ‘মৃত’ হিসেবেই পরিচিত। তবে, এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘আগ্নেয় মেখলার’ অংশ হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ভীতু অতীত, সাহসী বর্তমান:
আওগাশিমা আগ্নেয়গিরির নামে নামকরণ করা এই গ্রামের জনসংখ্যা বর্তমানে মাত্র ২০০ জন। অতীতে এই আগ্নেয়দ্বীপে যথেষ্ট লোকবসতি ছিল, কিন্তু ১৭৮০ সালের ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতের পর দ্বীপের সব মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। প্রায় ৫০ বছর পর আবারও কিছু মানুষ এখানে বসতি স্থাপন করেন, কিন্তু আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরনের আশঙ্কায় বড় সংখ্যক মানুষ আর ফিরে আসেনি। তবুও, যারা বর্তমানে এই দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদেরকে দেশের অন্যান্য নাগরিকরা ‘সাহসী’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের এই বিপজ্জনক জীবনযাত্রা দেখতে দৈনিক হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন এখানে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানি:
আওগাশিমা আগ্নেয়গিরি সমুদ্রের নিচ থেকে প্রায় ২০০-৪০০ মিটার উচ্চতায় উঠে এসেছে। এর চূড়ায় পৌঁছালে প্রশান্ত মহাসাগরের এক অসাধারণ প্যানোরোমিক দৃশ্য চোখে পড়ে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, চরম প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাসিন্দারা এই স্থান ত্যাগ করতে চান না। এক কথায় বলতে গেলে, তারা যেন দ্বীপটির মায়ায় বাঁধা পড়ে গেছেন।
আওগাশিমা পৌঁছানোর পথ:
আওগাশিমা দ্বীপে পৌঁছানোর দুটি প্রধান উপায় আছে – নৌকা এবং হেলিকপ্টার। জাপানের মূল ভূখণ্ড থেকে এই দুই মাধ্যমে এখানে আসা যায়। যদিও অতল সমুদ্রে নৌকা চালানো বেশ কঠিন এবং দ্বীপের পাশে নৌকা বাঁধার মতো সুবিধাজনক স্থান সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে এখানকার বাসিন্দারা সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই নিজেদের জীবন ধারণ করছেন। অন্যদিকে, ধনী পর্যটকরা প্রায়শই নিজস্ব উদ্যোগে হেলিকপ্টার ভাড়া করে এই দ্বীপে আসেন। এই হেলিকপ্টারের জন্য সমস্ত পর্যটককে হাচিওজিমার বিমানবন্দরে যেতে হয়, যা এই আগ্নেয় দ্বীপ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিকটতম স্থান।
আওগাশিমা শুধু একটি গ্রাম নয়, এটি মানুষের অদম্য সাহস এবং প্রকৃতির প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত।