উত্তর ২৪ পরগনা, বনগাঁর পূর্ণিমা দেবীর অসম লড়াই, দুই নাতনিকে নিয়ে ভাঙা কুঁড়েঘরে জীবন যুদ্ধ

উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর বনগাঁর শক্তিগড় নবোদয় ক্লাব এলাকায় এক জীর্ণ কুঁড়েঘরে দুই নাতনিকে নিয়ে এক অসাধারণ জীবনযুদ্ধে নেমেছেন পূর্ণিমা গোস্বামী (৬৫)। তাঁর এই লড়াইয়ে একদিকে যেমন রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা, তেমনই রয়েছে চরম দারিদ্র্য আর একাকীত্বের কষ্ট। বছর ১২-এর মনীষা অধিকারী ও ১০ বছরের মনিকা অধিকারী – এই দুই নাতনিই দিদা পূর্ণিমা দেবীর জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
একসময়ের ভরা যৌথ পরিবার আজ ছিন্নমূল। পূর্ণিমা দেবীর দুই ছেলের মধ্যে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন এবং অন্যজন বিয়ে করে আলাদা থাকেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মেয়ে ও জামাই তাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। দেড় বছর বয়সী মনীষা এবং মাত্র দু’মাসের মনিকাকে ঠাকুমার কাছে ফেলেই তাঁরা চলে যান। সেই থেকেই এই দুই শিশুর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন পূর্ণিমা দেবী।
অভাব নিত্যসঙ্গী তাঁদের। আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে যে সামান্য রোজগার হয়, তার একটি বড় অংশ চলে যায় ঘরভাড়ায়। বাকি টাকায় চলে খাওয়া-পরা এবং নাতনিদের পড়াশোনার খরচ। মনীষা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং মনিকা চতুর্থ শ্রেণিতে স্থানীয় স্কুলে পড়ে। বহু দিন তাদের খালি পেটে স্কুলে যেতে হয়, মিড ডে মিলই তখন তাদের একমাত্র ভরসা।
পূর্ণিমা দেবীর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি নাতনিদের কাছছাড়া করতে রাজি নন। তাঁর একটাই আকুতি, “ওরা ছেড়ে চলে গেলে আর বাঁচব না। যতদিন শরীর চলে, এভাবেই লড়াই চালিয়ে যাব।” দিদার শরীর খারাপ হলে বা কাজ করতে না পারলে, এই দুই বোন চাল-ডাল সংগ্রহের জন্য বেরিয়ে পড়ে। তাদের লাজুক স্বভাব এবং করুণ অবস্থা সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কিছু সমাজসেবী মানুষ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় পরিবারটি রেশনের সুবিধা পেয়েছে এবং তাদের ভাড়া ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুই নাতনির পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে এবং স্কুল থেকে তাদের সাইকেলও দেওয়া হয়েছে।
তবে, বার্ধক্য এবং অসুস্থতার কারণে পূর্ণিমা দেবীর শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। সরকারি সাহায্য তেমনভাবে না মেলায় তাঁদের জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ণিমা দেবীর একটাই আবেদন, যদি সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিরা তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান, তবে তিনি নাতনিদের একটু ভালোভাবে মানুষ করতে পারবেন। দিদা ও নাতনিদের এই অসম লড়াই সমাজের প্রতি এক বড় বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজ।