“জাদুকাঠি নেই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে”-দাবি প্রাক্তন RBI গভর্নর রঘুরাম রাজনের

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) সাম্প্রতিক সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত দেশে বিনিয়োগের গতি বাড়াবে— এমন ধারণার সঙ্গে একমত নন প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শুধুমাত্র বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে না, বরং এর পেছনে আরও অনেক জটিল বিষয় জড়িত থাকে। সোমবার এক সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই সংশয় প্রকাশ করেন।

রাজন বলেন, “এ মুহূর্তে সুদের হার খুব একটা বেশি নয়। আরবিআইয়ের সুদের হার ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হতে সময় লাগবে। আগে সুদের হার চড়া থাকলে তা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হতো। কিন্তু, এখন সুদের হার তার সেই কৌলীন্য হারিয়েছে বলেই আমার মনে হয়।” কাজেই, শুধুমাত্র সুদের হার কমালেই বিনিয়োগের গতি জাদুকাঠির মতো বেড়ে যাবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না বলেই তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন ঋণনীতি ঘোষণার সময় আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ঋণনীতি নির্ধারক কমিটি রেপো রেট (যে সুদের হারে বাণিজ্যক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দিয়ে থাকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক) ০.৫০ শতাংশ কমিয়েছিল। গত কয়েক মাসের মধ্যে সুদের হার সার্বিক ভাবে ১ শতাংশ কমে গিয়েছে। একই সময়ে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক তাদের ঋণনীতি নির্ধারণের অবস্থান ‘নিউট্রাল’ থেকে ‘অ্যাকোমোডেটিভ’ অর্থাৎ প্রয়োজনে সুদের হার বাড়ানো বা কমানোর পথ খোলা রেখেছে। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদের জোগান বাড়াতে ব্যাঙ্কগুলির নগদ জমার অনুপাতও কমানো হয়েছে।

রাজনকে শীর্ষ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আরবিআই সুদের হার কমানোর ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে কি না? এর জবাবে এই প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ বলেন, “বিনিয়োগের অনুকূল স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি করা এবং একাধিক শিল্পক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। তা হলেই শিল্পসংস্থাগুলি তাদের কঠোর অবস্থান বদলাবে এবং নিজেদের স্বার্থ ও অবস্থান সুরক্ষিত করতে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।”

অর্থাৎ, সুদের হার কমানো ছাড়াও বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা একাধিক বিষয়ের সম্মিলিত ফলের উপর নির্ভর করে বলে রাজন দাবি করেন। যদিও আগামী দিনে প্রচুর লগ্নি আসতে চলেছে, এমনটা তিনি মনে করেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিশ্ববাজারের আর্থিক সমস্যার আগে ভারতীয় শিল্পসংস্থাগুলি বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছিল। সে দিক দিয়ে বিচার করলে এখন খুব একটা বেশি বিনিয়োগের পথে তারা হাঁটবে না বলেই আমার বিশ্বাস।”

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভারতীয় শিল্পসংস্থাগুলি এখন অনেক বেশি সতর্ক হয়ে গিয়েছে। ‘ভারতীয় অর্থনীতির এখন তো এই অবস্থা’— এ কথা তারা আর বলতে পারবে না। নিম্নমধ্যবিত্তরা অর্থ খরচ করছে না, গ্রামাঞ্চলে খরচ বাড়ছে না বলে আগে অভিযোগ করত শিল্পসংস্থাগুলি। এখন তা বলার উপায় নেই তাদের কাছে। এখন পরিস্থিতি উল্টে গিয়েছে। উচ্চ মধ্যবিত্তরা এখন চেপে খরচ করছেন।” প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ভারতে বেসরকারি ক্ষেত্রের বিনিয়োগের পরিমাণ ১১ বছরের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফের সুদের হার কমাতে পারে কি না, এই প্রশ্নে আরবিআইয়ের নীতি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রাজন। তিনি দাবি করেছেন, “মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে বিচার করলে এখন পরিস্থিতি যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক এবং ইউএস-এর তরফে একাধিক দেশের উপরে চাপানো বর্ধিত হারে শুল্কের কারণে ভারতের মতো দেশ থেকে রপ্তানি বাড়তে পারে, যা আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধি আরও কমানোর পক্ষে সহায়ক হতে পারে।”