আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতীয় পাসপোর্ট এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ছুঁয়েছে। গত বছর যেখানে ভারতীয় পাসপোর্টের ক্ষমতা পাঁচ ধাপ নেমে গিয়েছিল, সেখানে এই বছর এক অভূতপূর্ব উত্থান দেখা গেছে। ২২ জুলাই প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট সূচক ২০২৫ অনুযায়ী, ভারতীয় পাসপোর্ট এক লাফে আট ধাপ এগিয়ে ৮৫তম স্থান থেকে ৭৭তম স্থানে উঠে এসেছে, যা দেশের ভ্রমণকারীদের জন্য এক দারুণ খবর। এই র‌্যাঙ্কিং নির্ধারিত হয় কোনো দেশের পাসপোর্টধারীরা পূর্ববর্তী ভিসা ছাড়াই কতটি গন্তব্যে প্রবেশ করতে পারেন তার ভিত্তিতে।

৫৯টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার:

বর্তমানে, ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ৫৯টি দেশে ভিসা ছাড়াই অথবা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধার মাধ্যমে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। এই দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ এবং থাইল্যান্ড, যেখানে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা, ম্যাকাও এবং মায়ানমার সহ আরও কয়েকটি দেশে ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পাওয়া যায়। তবে, এই সুবিধাগুলি অনেক ক্ষেত্রে ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং সময়কাল অনুযায়ী সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, তাই যাত্রা শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়মাবলী ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বৈশ্বিক সূচকে এশিয়ার আধিপত্য:

হেনলি পাসপোর্ট সূচকের শীর্ষে এশিয়ার দেশগুলির সুস্পষ্ট আধিপত্য বজায় রয়েছে। সিঙ্গাপুর ১৯৩টি দেশে ভিসা-মুক্ত সুবিধা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট হিসেবে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে। এরপরই রয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, যারা ১৯০টি দেশে প্রবেশাধিকার নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। হেনলি সূচকের উদ্ভাবক ডঃ ক্রিশ্চিয়ান এইচ. কেলিন এই উত্থানের পেছনে কৌশলগত কূটনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘শীর্ষে পৌঁছাতে কৌশলগত কূটনীতি অপরিহার্য, এবং সেটি বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’

অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি:

এই সূচকে সংযুক্ত আরব আমিরাত গত এক দশকে ৩৪ ধাপ এগিয়ে এসে বর্তমানে ৮ম স্থানে রয়েছে, যা তাদের কূটনৈতিক সাফল্যের পরিচায়ক। চিনও ২০১৫ সালের ৯৪তম স্থান থেকে বর্তমানে ৬০তম স্থানে উঠে এসেছে। ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি এবং স্পেন ১৮৯টি দেশে প্রবেশাধিকার নিয়ে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এরপরই অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল ও সুইডেন ১৮৮টি দেশে প্রবেশাধিকার নিয়ে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে।

পিছিয়ে থাকা দেশ ও নতুন প্রবণতা:

অন্যদিকে, আফগানিস্তান মাত্র ২৫টি গন্তব্যে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে তালিকার একেবারে তলানিতে রয়েছে, যা শীর্ষে থাকা সিঙ্গাপুরের সাথে ১৬৮টি গন্তব্যের বিশাল ব্যবধান নির্দেশ করে। একসময় শীর্ষে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট বর্তমানে যথাক্রমে দশম ও ষষ্ঠ স্থানে নেমে এসেছে। উদীয়মান দেশগুলির কৌশলগত অংশীদারিত্বে জোর দেওয়ার ফলে এই দুই দেশের আধিপত্য কমছে। এর ফলস্বরূপ, দ্বৈত নাগরিকত্ব বা ‘লাইফস্টাইল মাইগ্রেশন’ ক্রমেই অনেক নাগরিকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

ভারতীয় পাসপোর্টের এই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আন্তর্জাতিক ভ্রমণক্ষেত্রে দেশের নাগরিকদের জন্য এক বড় সুবিধা এনে দিচ্ছে। ভ্রমণপ্রেমীরা আশা করছেন, আরও বেশি দেশ যদি ভারতের জন্য ভিসা-মুক্ত বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল তালিকায় যোগ হয়, তবে ভারতীয় পাসপোর্টের ক্ষমতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।