পশ্চিমবঙ্গে সিইও দফতরের স্বায়ত্তশাসন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক

বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ সমীক্ষা ঘিরে যখন রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে, তখনই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জন্য এক নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরকে আরও বেশি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন করতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই নবান্নে মুখ্যসচিবের কাছে পৌঁছেছে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে যে, বর্তমান ব্যবস্থায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের অভাব রয়েছে। এই দফতরকে রাজ্যের অর্থ দফতরের উপর নির্ভর করতে হয় এবং এটি এখনও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে রয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকেন একজন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পর্যায়ের অফিসার। সেখানে সিইও নিজে একজন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (ACS) র‍্যাঙ্কের অফিসার। সিইও দফতরের কার্যকারিতায় এই নির্ভরশীলতা কমাতে এবং কার্যকর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একাধিক পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছে কমিশন।

নির্দেশিকা অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরকে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন দফতর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার সঙ্গে রাজ্য সরকারের অন্য কোনো দফতরের সরাসরি যোগ থাকবে না। এর জন্য রাজ্য সরকারকে একটি পৃথক বাজেটও বরাদ্দ করতে হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সিইও আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আরও স্বাধীনতা পাবেন বলে কমিশন মনে করছে। এছাড়া, সিইও-কে সহায়তা করার জন্য এই নতুন নির্বাচন দফতরে একজন আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, আর কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে সিইও দফতরে চারটি পদ শূন্য রয়েছে। কমিশন মুখ্যসচিবকে সেই পদগুলি পূরণের জন্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করার বার্তা দিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই চিঠি ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, “স্বাধীনতার এত বছর পরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন আবিষ্কার করল, তারা স্বাধীনও নয়, স্বতন্ত্রও নয়। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের যে দফতর, তারা তো জাতীয় নির্বাচন কমিশনের শাখা মাত্র। এতদিন কি তাঁরা স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারেননি? এই প্রশ্ন উঠছে। এতদিন তাহলে নির্বাচন কীভাবে হলো? আজকে অমিত শাহর নিয়োগে কমিশনার হয়ে তিনি কিংবা তাঁরা বলছেন, আমরা দেখব যাতে অর্ধেক লোক ভোটই দিতে না পারেন। শুধু বিজেপির সমর্থক হলেই ভোট দিতে পারেন। এই হচ্ছে পরিবর্তন।”

বামফ্রন্টের পক্ষ থেকেও সরব হয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের হয়ে যারা কাজ করবেন, তাঁরা কি সবাই রাজ্য সরকারের কর্মী না হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী হবেন? অন্যান্য সংস্থার কর্মী হবেন? কী করে হবেন? আমি জানি না। তবে নির্বাচন কমিশন যাই পদক্ষেপ করুক না কেন, তা রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে করা উচিত। এটা না করে, যদি একতরফা কিছু করে, তাহলে বুঝতে হবে তার পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দিলাম, এই মনোভাব গ্রহণযোগ্য নয়।”

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশিকা এবং তা ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিক্রিয়া আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।