“এত বড় সাহস…”- ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর পোস্টার ছিঁড়ে মমতার রোষে রেল পুলিশ

পশ্চিমবঙ্গের ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচির একটি হোর্ডিং ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে খড়্গপুরে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোষের মুখে পড়েছে। গতকাল ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং আরপিএফ-এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার, যখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে খড়্গপুর শহরের সাউথ সাইড এলাকায় ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচির একটি বিশাল হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। এই হোর্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একটি ছবিও ছিল। অভিযোগ, শুক্রবার আরপিএফ সদস্যরা ওই হোর্ডিংটি খুলে মাটিতে ফেলে দেন। এর পরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আরপিএফ সদস্যদের বচসা বাধে, যা দ্রুত রেল শহরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এত বড় সাহস। বাংলায় থাকবে আর আমার পোস্টার ছিঁড়বে। আমরা ধরে ফেলেছি। আপনাদেরকেও ধরতে হবে। মনে রাখবেন, সেন্ট্রাল ফোর্স বিজেপি নয় আর স্টেট ফোর্স মানেই তৃণমূল নয়। পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হয়।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য এই বিতর্ককে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ‘তীব্র অপমান’ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা দাবি করেন, রাজ্যের মাটিতে এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া যায় না। পরে অবশ্য স্থানীয় পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই হোর্ডিংটি আবার যথাস্থানে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আরপিএফ-এর খড়্গপুর টাউন পোস্টের ওসি আর. পি. সিনহার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, আরপিএফ কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। আরপিএফ-এর একজন শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রচার। সরকারি ব্যানার বলে বুঝতে পারিনি আমরা।”
জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এই বিষয়ে বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রীর ছবি দেওয়া কর্মসূচির হোর্ডিং খুলে মাটিতে ফেলে দেয় আরপিএফ। পরে নিজেদের ভুল স্বীকারও করে। তবে, এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এই ঘটনাটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার সীমা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এফআইআর দায়ের এবং মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায়, ঘটনাটি আগামী দিনে আরও জটিল মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।