কলকাতায় জোড়া রহস্যমৃত্যু, ল্যান্সডাউনে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, বেলগাছিয়ায় নির্মীয়মাণ বহুতলে মিলল মিস্ত্রির লাশ

মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্সডাউন এবং উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া থেকে দুটি পৃথক দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দুটি ঘটনাতেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে দুটি ক্ষেত্রেই খুনের সন্দেহ করা হচ্ছে।

ল্যান্সডাউনে যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার:

মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বোস রোডের ফুটপাথ থেকে এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। দেহের পাশেই একটি রক্তমাখা পাথর পড়েছিল, যা খুনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা টালিগঞ্জ থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত যুবকের নাম সোমনাথ চক্রবর্তী, যিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার বাসিন্দা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, “ওসি টালিগঞ্জের মাধ্যমে খবর পাই। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রক্তমাখা কাপড় ও পাথর পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে।” হোমিসাইড শাখার আধিকারিকরা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং রক্তমাখা পাথরটিও উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।

তদন্তকারীরা স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন, যাতে ঘটনার সময় এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। নিহত সোমনাথ কেন ল্যান্সডাউনে এসেছিলেন এবং তার আগে কখনো এখানে এসেছিলেন কিনা, সে বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করছে।

বেলগাছিয়ায় নির্মীয়মান বহুতলে মিস্ত্রির লাশ:

একই দিনে উত্তর কলকাতার কাশীপুরের বেলগাছিয়া রোড এলাকার রতনপুরে একটি নির্মীয়মান বহুতলের নিচ থেকে এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা সকালে দেহটি পড়ে থাকতে দেখে কাশীপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে এবং লালবাজারের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে যান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মিঠুন মণ্ডল (৪৫), যিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা। মিঠুন বেলগাছিয়ায় রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে এসেছিলেন এবং যে বহুতলের নিচ থেকে তাঁর দেহ মিলেছে, সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে অন্য মিস্ত্রিরাও কাজ করতেন।

পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।” তদন্তকারীরা মিঠুনের সহকর্মী মিস্ত্রিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এবং জানার চেষ্টা করছেন যে, দেহটি বহুতলের নিচে পড়ে থাকার পরও কেউ কেন জানতে পারল না, বা কেন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো না। এছাড়াও, গত রাতে মিঠুন কী কী করেছিলেন, কার কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং কারও সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

কলকাতার এই জোড়া রহস্যমৃত্যুর ঘটনা শহরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং পুলিশ দুটি ঘটনারই দ্রুত কিনারা করার চেষ্টা করছে।