জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক ইস্তফা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেহ, দিল্লির রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে

রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের হঠাৎ ইস্তফা দিল্লির রাজনৈতিক করিডোরে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সোমবার বিকেলে তিনি ফুরফুরে মেজাজে সাংসদদের সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘন্টা পরেই সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন – এই আকস্মিক ঘটনাক্রম নিয়ে জল্পনা ও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মন্তব্য করেছেন যে, এই ঘটনার পেছনে ‘কোনো গড়বড়’ আছে বলেই তাঁর মনে হয়।
ধনখড় তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘শারীরিক অসুস্থতা’ উল্লেখ করলেও, রাজনৈতিক মহলের একটি বড় অংশ এটিকে ‘অপসারণের আড়াল’ হিসেবে দেখছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আসেনি, এমনকি রাষ্ট্রপতির তরফ থেকেও ইস্তফা গৃহীত হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
একুশে জুলাইয়ের পরের দিন নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি কীভাবে জানব এর পেছনে কোনো গড়বড় আছে কি না! আমি তো ডাক্তার নই। তবে যতদূর জানি উনি যথেষ্টই সুস্থ। তাহলে পদত্যাগ করলেন কেন?” মুখ্যমন্ত্রী আরও যোগ করেন, “আমার মনে হয়, পুরো ঘটনাটাই সাজানো হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে না।” তাঁর এই মন্তব্যে ধনখড়ের ইস্তফার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
কেন জল্পনার কেন্দ্রে ধনখড়ের পদত্যাগ?
রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করা খবর অনুযায়ী, ধনখড়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্কের অবনতি মূলত বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত তাঁর কিছু মন্তব্য থেকে শুরু হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় ও মন্তব্যের বিরোধিতা করে ধনখড় বলেছিলেন যে, “শীর্ষ আদালত নিজেকে সুপার পার্লামেন্ট মনে করছে।” এই মন্তব্যের পর কেন্দ্রের তরফে তাঁকে পরোক্ষ বার্তা দেওয়া হয় যেন ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য না করেন। তবে ধনখড় পাল্টা জানান যে, তিনি আইন জানেন এবং সেই জ্ঞান থেকেই বক্তব্য রেখেছেন।
ঘটনা চরমে ওঠে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণ বিতর্কে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ধনখড়ের একাধিক মন্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই চাপেরই ফলস্বরূপ একপ্রকার ‘চাপ প্রয়োগে পদত্যাগ’ করানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বার্তা কি লুকিয়ে আছে ধনখড়-পর্বে?
ধনখড়ের সঙ্গে কেন্দ্রের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বিজেপির অন্দরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ কেউ বলছেন, ধনখড়ের অতিসক্রিয়তা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছিল। আবার অনেকেই মনে করছেন, এটি আগামী লোকসভা নির্বাচনের কৌশলের অংশ হতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে কেন্দ্রের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি সব ভাষাকে সম্মান করি, সব রাজ্যকে সম্মান করি। কিন্তু কেন্দ্র যদি মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে প্রশ্ন তোলা তো আমার দায়িত্ব।” তিনি আরও যোগ করেন, “আগে ঘর সামলান, তারপর বাংলার দিকে তাকাবেন।”
জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ আপাতত দেশের রাজনীতিতে এক বিস্ময়কর মোড়। এর পেছনে সুস্থতা নাকি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সেই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের কোলেই নিহিত। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, বঙ্গ রাজনীতিতে এই ইস্তফা নিছক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না।