একুশে জুলাইয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই সুর চড়ালেন মমতা, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক ও অসম-কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ

একুশে জুলাইয়ের জনসভার পরদিনই নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠক থেকে কেন্দ্র ও অসম সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল তৃণমূলের মেগা সমাবেশ থেকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল স্পষ্ট করার পর আজ যেন সেই সুর আরও চড়িয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলে তৃণমূল ঘেরাও কর্মসূচি করবে। ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়াকে তিনি সরাসরি ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এমনকি, ‘বাংলাভাষী’ হওয়ার কারণে বাংলা ভাষার উপর ‘সন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথাও বলেছিলেন তিনি।
আজ আলিপুরদুয়ার জেলার একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অসম ও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তোলেন। তিনি জানান, অসম সরকারের পক্ষ থেকে কোচবিহার জেলায় একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে তাঁর আলিপুরদুয়ারের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “বাংলার বিষয়ে অসম হস্তক্ষেপ করছে। এটা বেআইনি। সীমারেখা লঙ্ঘন করছে তারা। আমি বলব নিজেদের চরকায় তেল দিন।” তিনি আরও বলেন, “ওখানে তো মন্দির ভেঙে দিচ্ছেন। যদি ভাবেন এভাবে দেশ চালাবেন, তাহলে দেশ একদিন বিভক্ত হয়ে যাবে। চিঠিটা আবার অসমিয়া ভাষায় লেখা, যেন ইঙ্গিতপূর্ণ!”
মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন যে, হরিয়ানা থেকে একটি সন্দেহজনক চিঠি এসেছে যেখানে মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু নাগরিকের নাম উল্লেখ করে তাদের “ভেরিফাই” করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “এরা কি চাইছে বাংলা দখল করতে? ভাষা সন্ত্রাস চলছে? মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।” তিনি বলেন, “এইভাবে যদি ভাবেন জিতবেন, তাহলে ভুল। কালই জনবিস্ফোরণ হয়ে গেছে। ওই চিঠিতে ৫২ জনের নাম রয়েছে। এটা কি ফ্যাসিবাদ নয়?”
মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের তালিকা থেকে বাদ যাননি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও। তিনি বলেন, “মণিপুরকে তো আপনি কন্ট্রোলই করতে পারলেন না। অথচ আপনি উত্তর-পূর্বের দায়িত্বে!” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, উত্তর-পূর্বের দায়িত্বে থাকা আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নাকি মণিপুরে যাওয়ারই সাহস পান না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষায় কথা বললেই সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে, অথচ বাংলা নিজে বহু ভাষাকে সম্মান করে। তাঁর মন্তব্য, “এটা তো ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার, তাঁরা যে কোনও জায়গায় কাজ করতে পারেন। তাহলে বিজেপি শাসিত রাজ্যে গেলে সমস্যা কেন?” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “গুজরাট থেকে একজনকে শিকলে বেঁধে আনা হয়েছিল। তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। এটা কোন ভারতীয়তা?”
মুখ্যমন্ত্রীর এই বিস্ফোরক মন্তব্যগুলি রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।