“সংবিধানকে আক্রমণ করছেন…”-রোহিঙ্গা ইস্যুতে মমতাকে নিশানা, কী বললেন শুভেন্দু?

ধর্মতলায় তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মেগা সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ভোটার তালিকা সংশোধন এবং ভিন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার ইস্যুতে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করছেন, ঠিক তখনই শিলিগুড়িতে বিজেপির ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন। শুভেন্দু সরাসরি নির্বাচন কমিশন এবং ভারতীয় সংবিধানকে আক্রমণের অভিযোগ তুলে তৃণমূলের দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানালেন।
তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর পূর্বে করা এক মন্তব্যের জবাব দেন, যেখানে শুভেন্দু বাংলায় ‘১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা’ থাকার দাবি করেছিলেন। মমতা বলেন, “বিজেপির এক নেতা বলছে, বাংলায় নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কত? ইউএন বলছে দশ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। কোথায় পেলেন ১৭ লক্ষ?”
এর পাল্টা জবাবে শুভেন্দু অধিকারী শিলিগুড়ি থেকে বলেন, “রোহিঙ্গা মুসলমান এবং বাংলাদেশি মুসলমানের একজনের নামও ভোটার তালিকায় থাকবে না।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমরা ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ২৭ হাজার অবৈধ ভোটার পেয়েছি। কমিশনকে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি মুসলমানরা তালিকা থেকে বাদ গেলে তৃণমূলের জেতার কোনো সুযোগ নেই।” এই মন্তব্যগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আগামী দিনগুলিতে ভোটার তালিকা সংশোধন একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হতে চলেছে।
কলকাতায় তৃণমূলের পূর্ব নির্ধারিত ২১ জুলাইয়ের সভার দিনেই শুভেন্দু অধিকারী উত্তরবঙ্গে ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর ডাক দেন। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার আসনে জিতলেও কোচবিহার আসনটি হাতছাড়া হয় এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে হারতে হয়। উত্তরবঙ্গের সভা থেকে শুভেন্দু দাবি করেন, “কী করে জিতেছেন ২০২৪-এর ভোটে আমরা জানি। নিশীথের সঙ্গে না পেরে ওকে কায়দা করে হারানো হয়েছে।” তিনি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ থেকে বিধায়ক সংখ্যা বাড়ানোরও আহ্বান জানান।
সোমবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার বিজেপি কর্মী-সমর্থক শিলিগুড়ির তিনবাতি মোড়ে এসে জমায়েত হন। সেখান থেকে মিছিল করে তারা ফুলবাড়ি চুনাভাটি ফুটবল মাঠে পৌঁছান। এই মিছিলকে কেন্দ্র করে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল থেকেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়ক থেকে উত্তরকন্যাতে ঢোকার রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। তিনবাতি মোড়, উত্তরকন্যা এলাকা এবং সভাস্থল পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করে ঘিরে রাখা হয়, যাতে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।
একই দিনে রাজ্যের দুই প্রান্তে তৃণমূল ও বিজেপির এই বড় সমাবেশ এবং শীর্ষ নেতাদের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
“`