মৃত্যুফাঁদে ডিভিসি মোড়ের আন্ডারপাস, দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রাপ্ত সুবিধাও এখন নরক যন্ত্রণা দুর্গাপুরবাসীর

বহু মৃত্যু আর দীর্ঘ আন্দোলনের পর যে ডিভিসি মোড়ের আন্ডারপাসটি নির্মিত হয়েছিল, দুর্গাপুরের সেই পথ এখন স্থানীয়দের কাছে চরম দুর্ভোগ আর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই আন্ডারপাস মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে; খানাখন্দে ভরা, অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং নিরন্তর নর্দমার জলে প্লাবিত এই সুড়ঙ্গ দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
আশ্বাস নয়, শুধুই দুর্ভোগ:
১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ডিভিসি মোড়টি দুর্গাপুরের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে জাতীয় সড়কের সংযোগকারী এক গুরুত্বপূর্ণ মিলনস্থল। পূর্বে এই মোড়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ একটি ‘ইউ টার্ন’ উড়ালপুল তৈরি করেছিল, যার উচ্চতা বেশি হওয়ায় হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ফলস্বরূপ, অবৈধভাবে পায়ে হেঁটে জাতীয় সড়ক পারাপার করতে গিয়ে কয়েক বছরে প্রায় দশজন পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তখন বিকল্প ব্যবস্থার দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন, জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান, এমনকি পুলিশের লাঠিচার্জের শিকারও হন।
অবশেষে, ২০২২ সালে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আন্ডারপাস চালুর জন্য পরিদর্শন করে এবং পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে আরও এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ডের পর পুরোনো আন্ডারপাসটি সংস্কার করে দেওয়া হয়। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, এতকিছুর পরও তাঁরা যে আন্ডারপাসটি পেলেন, তা এখন ‘খানাখন্দে ভরা অন্ধকার সুড়ঙ্গ’ মাত্র। এর ভেতরে সারাক্ষণ নর্দমার জল বয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে দিয়ে বাইক ও চার চাকা গাড়ির অবাধ দৌরাত্ম্য চলছে। দিনের বেলাতেও মোবাইলের টর্চ জ্বেলে এই দীর্ঘ আন্ডারপাস পেরোতে বাধ্য হচ্ছেন পথচারীরা, যা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
ক্ষোভ ও দাবির মুখে প্রশাসন:
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে এই আন্ডারপাসটি সংস্কার করে আলোর সুব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে, আন্ডারপাস দিয়ে বাইক ও চারচাকা গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করে কেবল পথচারীদের জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করার দাবিও তাঁরা তুলেছেন।
এই বিষয়ে পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যা রাখি তিওয়ারি জানান, “এ বিষয়ে সাংসদ কীর্তি আজাদ ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
যদিও এই আশ্বাসে স্থানীয়দের ক্ষোভ কমছে না। তাঁদের প্রশ্ন, বহু আন্দোলন ও মৃত্যুর বিনিময়ে যে আন্ডারপাস তৈরি হলো, তার এমন বেহাল দশা কেন? কেন প্রশাসনের নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি আবারও মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠছে? অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আবারও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা, এবং তাঁদের চোখে মুখে এখন শুধু দ্রুত সমাধানের প্রত্যাশা।