সন্দিগ্ধ বোমার আস্তানা বন্ধ জুটমিল, জগদ্দলে উদ্ধার এক ডজনের বেশি তাজা বোমা, ফের আতঙ্কে এলাকাবাসী

পরিত্যক্ত বন্ধ জায়গাগুলো যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ মিলল ফের একবার জগদ্দল মেঘনা জুট মিল চত্বরে। দীর্ঘদিনের বন্ধ এই মিলের ভেতরে আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে স্থানীয়রা যা দেখতে পেলেন, তা দেখে তাঁদের চোখ কপালে। মিলের ভেতর থেকে উদ্ধার হয়েছে এক ডজনেরও বেশি তাজা বোমা, যা মুহূর্তে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার খবর পেয়ে জগদ্দল থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং বোম ডিসপোজাল স্কোয়াডের সহায়তায় বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করে।
জুট মিলের পরিত্যক্ত জঙ্গলে বোমার স্তূপ:
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জগদ্দল মেঘনা জুট মিল দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। মিলের ভেতরের অংশ এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এদিন কিছু স্থানীয় লোক ওই এলাকায় আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছিলেন। তখনই তাঁরা সন্দেহজনক কিছু জিনিস দেখতে পান। কাছে গিয়ে দেখতে পান যে, জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অন্তত বারোটিরও বেশি তাজা বোমা। স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গেই জগদ্দল থানায় খবর দেন।
খবর পেয়ে জগদ্দল থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলকে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় এবং বোম ডিসপোজাল স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়। বোম স্কোয়াডের টিম এসে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করে যে, বোমাগুলি তখনও সক্রিয় এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক। এরপরই বোমাগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই সেগুলিকে নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ও এলাকাবাসীর ক্ষোভ:
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, কোনো দুষ্কৃতী দলই এই ফাঁকা মিল চত্বরকে বোমা মজুদের গোপন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তবে, এতদিন ধরে কীভাবে এই বিপুল সংখ্যক বোমা সেখানে ছিল এবং কারা এগুলি রেখেছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে জগদ্দল থানার তরফে। এই ঘটনার খবর চাউর হতেই জুট মিল চত্বরের এলাকার মানুষ রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এই ঘটনা আবারও একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে – জুটমিল চত্বরের এলাকাবাসীরা কি তবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই জীবনযাপন করছেন? জগদ্দল-ভাটপাড়া এলাকায় বোমা উদ্ধার, খুনোখুনি বা হিংসার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু দিনের পর দিন এমন ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন কেন চলবে, এই প্রশ্ন এখন প্রশাসনের দিকেই ছুঁড়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই তীব্র ঔদ্ধত্যের সমাধান প্রশাসন কীভাবে করবে, জগদ্দল-ভাটপাড়াবাসীর চোখ এখন সেই দিকেই। পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা জানতে তদন্ত চলছে এবং জুট মিল এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র নজরদারি বাড়ানোই কি যথেষ্ট, নাকি এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অপরাধমূলক প্রবণতাকে সমূলে উৎপাটন করতে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে।