একুশের মঞ্চে তারকা সমাবেশ, বিজেপির কটাক্ষ, ‘জীবিকা বাঁচাতে বাধ্য’, ‘নিজেরা ভোট দেবেন না’!

তৃণমূল কংগ্রেসের ২১শে জুলাইয়ের শহীদ সমাবেশ বরাবরই তারকাবহুল। কিন্তু এই বছর, একদা বিজেপি সমর্থক এবং প্রার্থীদের শাসকদলে যোগদানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, রূপাঞ্জনা মৈত্র এবং রিমঝিম মিত্রকে একুশের মঞ্চে দেখা যাওয়ার পর বিজেপির অন্দর থেকে উঠে এসেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া, যেখানে তাঁদের এই যোগদানকে ‘জীবিকার চাপ’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
রুদ্রনীল ঘোষের বিস্ফোরক দাবি: ‘এঁরা কেউ তৃণমূলে ভোট দেবেন না’
বিজেপির স্টেট কালচারাল সেল-এর কনভেনর রুদ্রনীল ঘোষ, এই তারকাদের দলবদল নিয়ে ইটিভি ভারতকে বলেন, “ওঁরা প্রত্যেকেই গুণী শিল্পী। সবাই জানে বাংলায় শিল্পীদের জীবিকা ও প্রাণ আটকে টলিউডে অরূপ-স্বরূপের নির্দেশে। তাই এঁরা জীবন-জীবিকা বাঁচাতে মন থেকে না-চাইলেও তৃণমূলকে সমর্থন দেখাতে বাধ্য।” রুদ্রনীল আরও বিস্ফোরক দাবি করে বলেন, “মিলিয়ে নেবেন, এঁরা নিজেরা কেউ তৃণমূলে ভোট দেবেন না, আর কাউকে ভোট দিতে অনুরোধও করবেন না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই শিল্পীরা তৃণমূলের দুর্নীতি, যেমন—চাল-ডাল-রেশন চুরি, চাকরি-আবাস চুরি, শিক্ষা চুরি বা আরজি কর-হাঁসখালি, সন্দেশখালি-কসবা কাণ্ডকে সমর্থন করেন না, এমনকি মোথাবাড়ি, মহেশতলা, মুর্শিদাবাদে হিন্দু হত্যা ও নিপীড়নকেও সমর্থন করেন না।
রুদ্রনীলের মতে, এই শিল্পীরা জানেন, “বাংলা ও বাঙালিকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে কারা ধ্বংস করেছে। তৃণমূলের বাংলা ও বাঙালি বিরোধী এই চরিত্র জেনেও একুশের মঞ্চে উপস্থিতি তাঁদের।” তবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের বিরোধিতা করার কারণ নেই বলেও জানান রুদ্রনীল, তাঁর বিশ্বাস, ২০২৬ সালে এই শিল্পীরা বিজেপিকেই ভোট দেবেন। তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল ‘জীবিকা-বন্ধের এই ভয়ের খেলা’ খেলছে।
প্রথম সারির তারকাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন:
বিজেপি নেতার দাবি, এবার একুশের মঞ্চে নতুন করে প্রথম সারির কোনো অভিনেতা ও পরিচালকদের দেখা যায়নি। অনেক পুরনো শিল্পীও মঞ্চে ওঠেননি, “যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া টান করে নিয়েছেন।” তাঁর মতে, শুধুমাত্র বাধ্যবাধকতায় কিছু শিল্পী গিয়েছেন যারা তৃণমূলের বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলর বা যারা শুধুমাত্র জীবিকা বাঁচাতে চান। রুদ্রনীল অভিযোগ করেন, “অনেককে ভয় দেখিয়ে আমন্ত্রণ জানালেও তাঁরা আসেননি। যাঁরা আজ গিয়েছেন তাঁরা সবাই জানেন বাংলার সব ক্ষতির মূলে বাংলা ও বাঙালি বিরোধী তৃণমূল। মিথ্যে, চুরি, হুমকি, লুট ছাড়া এদের কোনো কাজ নেই।”
সুরজিৎ চৌধুরীর ৬ বছর পূর্তি ও শ্রাবন্তীর দলবদল:
অন্যদিকে, এদিন ২১শে জুলাইয়ে বিজেপিতে ছয় বছর পূর্ণ করলেন অভিনেতা সুরজিৎ চৌধুরী। শ্রাবন্তী ও রূপাঞ্জনার দলবদলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আজ সংবাদ মাধ্যম থেকেই শুনলাম যে শ্রাবন্তী আর রূপাঞ্জনা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এটা তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার।” শ্রাবন্তী ২০২১ সালে বিজেপির টিকিট পেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন এটা তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার। কিছু এসে যায় না তাতে। বিজেপি ইজ বিজেপি।”
সুরজিৎ আরও বলেন, “আজ ২০২৫-এর ২১ জুলাই বিজেপিতে আমার ছয় বছর হয়ে গেল। বিজেপি আমাকে যতদিন রাখবে আমি থাকব। আমরা একসঙ্গে লড়াই করছি ২০২৬-এ বিধানসভা ভোটে জেতার জন্য।” তিনি অগ্নিমিত্রা পাল, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, লামা সহ ইন্ডাস্ট্রির অনেককে পাশে থাকার কথা উল্লেখ করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, “২০২৬-এ পশ্চিমবাংলার মানুষই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কফিনের শেষ পেরেকটি পুঁতবে। একটার পর একটা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন উনি। কখনও আরজি কর, কখনও কসবা। মাননীয়াকে নিয়ে নতুন করে বলার আর কিছু নেই।”
কাঞ্চনা মৈত্রের নিরপেক্ষ অবস্থান:
অভিনেত্রী তথা একসময়ের বিজেপি সমর্থক কাঞ্চনা মৈত্র অবশ্য এই দলবদল নিয়ে কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জানান, “আমি এখন রাজনীতি থেকে বহু দূরে। নিজের কাজ নিয়েই আছি। তাই রূপাঞ্জনা বা শ্রাবন্তী আমার সতীর্থ রাজনীতিতে নয়। অভিনয়ে বলতে পারি।” তিনি বলেন, “রূপাঞ্জনার প্রত্যাবর্তন বা শ্রাবন্তীর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে তাই একটা কথাই বলব, এটা ওঁদের নিজস্ব ব্যাপার। সংবিধানেই আছে প্রত্যেকটা মানুষ তাঁর পছন্দমতো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানাতে পারে। সমস্যা হল আমরা একটু বেশিই সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছি সংবিধানকে। আর তাই হয়ত দলবদল এত হচ্ছে।” তবে তিনি মঞ্চে উপস্থিত সকল জনপ্রতিনিধি ও ভাবী জনপ্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁদের ভালো কাজের আশা প্রকাশ করেন।
এই তারকাদের দলবদল নিয়ে বিজেপির এই কড়া প্রতিক্রিয়া এবং পাল্টা অভিযোগ, আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরও উত্তাপ ছড়াবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।