একুশের মঞ্চে ‘বাঙালি হেনস্থা’র অভিযোগের পাল্টা, শমীক ভট্টাচার্যের ‘বিজেপি মুক্ত ভারত অসম্ভব’ চ্যালেঞ্জ ও তীক্ষ্ণ কটাক্ষ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভিন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা’ এবং ‘বাংলা ভাষা অবমাননার’ অভিযোগের জবাব দিতে এবার ময়দানে নামলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। ২১শে জুলাইয়ের শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সমাবেশের পরপরই তিনি পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিক প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন। একইসঙ্গে, তিনি এক বিস্ফোরক ভবিষ্যৎবাণীও করে গেলেন।
‘বিজেপি মুক্ত ভারত অসম্ভব’: শমীক ভট্টাচার্যের চ্যালেঞ্জ
শমীক ভট্টাচার্য এদিন দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “ওনার (মুখ্যমন্ত্রীর) দীর্ঘায়ু কামনা করি, তিনি শতায়ু হন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁর জীবদ্দশায় কোনোদিন বিজেপি মুক্ত ভারত, বিজেপি মুক্ত কেন্দ্রীয় সরকার দেখে যেতে পারবেন না।” এই মন্তব্য কার্যত তৃণমূলের ‘বিজেপি হঠাও’ স্লোগানের বিরুদ্ধে বিজেপির আত্মবিশ্বাসকে তুলে ধরেছে। তিনি আরও বলেন যে, গুলি চালিয়েছে সিপিআইএম, কিন্তু শহীদের মঞ্চে আক্রমণ চালানো হচ্ছে বিজেপির ওপর।
‘বাঙালি হেনস্থা’ বনাম ‘ছন্দবদ্ধতা’:
সম্প্রতি ভিন রাজ্যে বাঙালিদের ‘হেনস্থা’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে শমীক ভট্টাচার্য তীক্ষ্ণ জবাব দেন। তিনি বলেন, “শত্রুঘ্ন সিনহা বাংলায় বক্তৃতা করবেন, আমাদের শুনতে ভাল লাগবে।” পাশাপাশি, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ‘কবি’ ও ‘চিত্রকার’ সত্তার প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ছন্দবদ্ধতা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কবি মনে কখন কী উঠে আসবে, এগুলি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।” এর মাধ্যমে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগগুলিকে অতিরঞ্জিত এবং আবেগপ্রবণ বলে ইঙ্গিত করেন।
শহীদ দিবসে তীক্ষ্ণ কটাক্ষ: ‘বনভোজন’ বনাম ‘থ্রেটের রাজনীতি’
তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ সভাকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “অতদূর থেকে ডেকে নিয়ে এসেছেন, বাঙালি নিরামিষ খাবে কেন, বাঙালি তো বেসিক্যালি নিরামিষাশী নয়। তো ডিম ভাত খাইয়েছেন, মাংসভাত খাইয়েছেন, ভাল কথা। এটা তো শহিদের সমাবেশ নয়, এটা তো আনন্দ-অনুষ্ঠান করেছেন।” তাঁর এই মন্তব্যে শহীদ দিবসের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং এটিকে রাজনৈতিক সমাবেশ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “তৃণমূলের রাজনীতিটাই থ্রেটের রাজনীতি। আর সর্বোপরি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে, তাঁদের গতিমুখকে স্তব্ধ করে দেওয়ার রাজনীতি। পুরোটাই জব্দ করার রাজনীতি।”
নিয়োগ দুর্নীতি ও পরিযায়ী শ্রমিক প্রসঙ্গে প্রশ্ন:
নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে শমীক ভট্টাচার্য সরাসরি তৃণমূল সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, “নিয়োগ দুর্নীতিতে মানুষের জীবন থেকে ১০ বছর হারিয়ে গেছে। কে ফিরিয়ে দেবে?” পরিযায়ী শ্রমিক এবং রাজ্যের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভিনরাজ্যে পাড়ি জমানোর প্রসঙ্গেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উত্তর চেয়েছেন। শমীক বলেন, “গত ১১ বছরে কত পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভিনরাজ্যে কাজ করছেন? মুখ্যমন্ত্রী উত্তর দিন, পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা কেন এ রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে? সামান্যটুকু আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর, আজকে অভিভাবকরা তাঁদেরকে ভিনরাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।”
এছাড়াও, তিনি পুরনো ঘটনাকে টেনে এনে বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালিদের উপর আক্রমণের অভিযোগের জবাব দেন। তিনি বলেন, “জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে, হ্যাঁ দেওয়া হয়েছে। কারণ এখানে বিজেপির সরকার আছে। যারা কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দেয়। কোর্টের নির্দেশ নিয়েই, যে অবস্থাটা সেখানে তৈরি হয়েছিল, একটি লাইন থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ-কে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, কাটা হয়েছে।”
শমীক ভট্টাচার্যের এই আক্রমণাত্মক বক্তব্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আগামী দিনগুলিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে ‘বাঙালি সত্তা’ এবং ‘উন্নয়ন ও দুর্নীতির’ বিতর্ক আরও তীব্র হবে।