“রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি মুসলমানদের একটিকেও থাকতে দেব না”-ফের হুঙ্কার শুভেন্দুর

কলকাতার ধর্মতলায় যখন তৃণমূল কংগ্রেস ২১শে জুলাই শহিদ দিবস পালন করছে, ঠিক সেই একই সময়ে শিলিগুড়িতে বিজেপির যুব মোর্চার ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে এদিন সকালেই শিলিগুড়ি পৌঁছান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর নেতৃত্বেই উত্তরবঙ্গের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা উত্তরকন্যা অভিযান করছেন এবং এই মঞ্চ থেকেই উত্তরকন্যাকে ‘পবিত্র’ করার ডাক দিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী।

‘চোরদের জমায়েত’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূলকে শুভেন্দুর তীব্র আক্রমণ:

শুভেন্দু অধিকারী ধর্মতলার তৃণমূলের শহিদ দিবসকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, “প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল, ২১ তারিখ কোনও প্রোগ্রাম পশ্চিমবঙ্গে করতে দেওয়া যাবে না। কারণ রানিমা, পিসিমা, চোরেদের রানি ধর্মতলায় সভা করছে। কয়েক হাজার দাগী চোর, আজ কয়লা চুরি, গাছ চুরি, গরু পাচার, ইঁট চুরি, পায়খানা চুরি বন্ধ রয়েছে। কারণ আজ চোরেদের জমায়েত হয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “জলঙ্গির নেতা মোশারফ হুসেন পাগলু ডান্স করতে করতে যাচ্ছেন। এক তৃণমূলের নেতা মদ্যপ অবস্থায় সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছেন।”

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, “উনি চ্যালেঞ্জ করেছেন ফের ২৬ বিধানসভায় ক্ষমতায় আসবেন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি ২৬-এ আপনাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব।” তিনি আরও বলেন, “বিহারের মতো এসআইআর চাই। ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে যে সব হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা শরণার্থী। তাঁরা বহিরাগত নন। ভারতীয় মুসলিমরা নিশ্চিন্ত থাকুন। কিন্তু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমানদের একটাকেও থাকতে দেব না।” এই মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

ভোটের কারচুরি ও এইমস নিয়ে রাজ্যকে নিশানা:

শুভেন্দু অধিকারী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের হারের পেছনে অরবিন্দ মিনা ও এসপি’কে দায়ী করে অভিযোগ করেন, “দুজন কাউন্টিং বুথে ঢুকে ক্যামেরা বন্ধ রেখে ছাপ্পা মেরেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রমাণ করে দেব।” এছাড়াও তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরবঙ্গে এইমস (AIIMS) স্থাপন করতে চাইলেও রাজ্য সরকার জায়গা দিচ্ছে না। তাঁর মতে, “হিন্দুরা বাঁচতে চাইলে এই মহিলাকে সরাতে হবে।”

প্রশাসন ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি নেতৃত্ব:

উত্তরকন্যা অভিযানে প্রশাসনকে দিয়ে ‘আরেকটা উলেন বর্মন’ করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে বালি-পাথর পাচারে তৃণমূল কোনো কিছু বাকি রাখেনি। পাহাড় ও চা বাগানে বঞ্চনা অব্যাহত বলেও তিনি অভিযোগ করেন। চা শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না এবং চা বাগানের জমি ‘হর্ষ নেওটিয়াদের বেচার কাজ’ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেও অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু।

‘উত্তরকন্যা পবিত্র করার ডাক’ ও নারী সুরক্ষার দাবি:

শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ কর্মসূচির শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতাদের তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “তৃণমূলের চোর নেতা, মন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর কারণে ‘উত্তরকন্যা’ অপবিত্র হয়েছে। আমরা এই অভিযান করে উত্তরকন্যাকে পবিত্র করব।”

শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “নারী সুরক্ষার দাবিতে এই অভিযান। এখানে মহিলারা কেউ সুরক্ষিত নন। মাটিগাড়ার ক্লাস ১০-এর ছাত্রী, কালিয়াগঞ্জের রাজবংশী মেয়েদের কী করেছে তা মনে রাখবেন। কাউকে ছাড়া হবে না। আগামী ৪ অগাস্ট ৬৫ জন এমএলএকে নিয়ে কোচবিহারে আসছি। ওইদিনই উত্তরকন্যাতে আসব। সচিবের সঙ্গে দেখা করব। আগের দিন ঢুকতে দেননি।”

এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার সহ একাধিক জেলা থেকে প্রচুর বিজেপি কর্মী-সমর্থক শিলিগুড়িতে এসে ভিড় করেছেন, যা শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।