টাঙনের জলে বিচ্ছিন্ন মালদহের তিন গ্রাম, পাকা সেতুর আশায় জীবন বাজি রেখে পারাপার

সামান্য বর্ষাতেই মালদহের টাঙন নদী যেন তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের জীবনে বিভীষিকা নামিয়ে আনছে। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোটুকুও এখন জলের তলায়, আর প্রাণ হাতে নিয়ে পারাপারের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। পুরাতন মালদহের মুচিয়া এবং হবিবপুর ব্লকের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া টাঙন নদীর এই বিপদসংকুল অবস্থা চর লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর, সিন্ধিয়া, ডোবা পাড়া এবং বুলবুলচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

বর্ষার জলে ভাসছে দুর্ভোগ:

গত কয়েকদিনের লাগাতার বর্ষণে টাঙন নদীর জলস্তর অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, যার ফলে নদী পারাপার এখন চূড়ান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুখা মরসুমে বাঁশের সাঁকো কিছুটা হলেও স্বস্তি দিলেও, বর্ষায় তা সম্পূর্ণ অকার্যকর। নদী পারাপারের জন্য গ্রামবাসী রঞ্জিত সরকার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “পাকা সেতুর জন্য মাটি পরীক্ষাও হয়েছে, কিন্তু তারপর আর কোনো কাজ এগোয়নি। অথচ প্রতি বছর প্রাণ হাতে নদী পারাপারের জন্যও ঘাট কর্তৃপক্ষকে ৮০০ টাকা দিতে হয়।” ঘাটের কর্মী গোবিন্দ হালদারও পাকা সেতুর প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে বলেন, “মাচা জলে ডুবে যাওয়ায় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু পাকা সেতু ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”

শিক্ষার্থী থেকে কর্মজীবী, সবাই আতঙ্কিত:

এই বিপজ্জনক যাতায়াতের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল ও টিউশনের জন্য নিয়মিত নদী পারাপারকারী শিক্ষার্থীদের। প্রিয়াঙ্কা সরকার নামের এক স্কুলছাত্রী আতঙ্কের সঙ্গে জানায়, “স্কুল, টিউশনের জন্য দিনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচবার নদী পারাপার করতে হয়। আর প্রতিবারই যেন ভগবানের ভরসায় নদী পার হই। মাচা দিয়ে যেতে খুব ভয় হয়।” নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বা জীবিকার তাগিদেও এই গ্রামের মানুষদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় প্রতিদিন।

প্রশাসনের উদাসীনতা ও অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি:

দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন মালদহ এবং হবিবপুর ব্লকের সংযোগস্থাপনের জন্য টাঙন নদীর উপর একটি পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দাবি পূরণে কোনো হেলদোল নেই। ফি বছর বর্ষায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করা যেন এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের রোজনামচা হয়ে উঠেছে।

যদিও মালদা জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি জানান, সেতুর দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, এই আশ্বাস গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের কতটা অবসান ঘটাবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যতক্ষণ না একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হচ্ছে, ততক্ষণ টাঙনের জলের সঙ্গে এই গ্রামবাসীদের সংগ্রাম চলতেই থাকবে।