খড়গপুরের জনজোয়ারে দিলীপ ঘোষের শক্তি প্রদর্শন, শুভেন্দুকে ছাপিয়ে আদি বিজেপির প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠা

সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, আজ খড়গপুরের গিরি ময়দানে শহীদ স্মরণ সমাবেশে বিশাল জনসমাগম ঘটিয়ে নিজের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা আরও একবার প্রমাণ করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। গতকালই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই জনসভার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, বিজেপির এই লড়াই থামবে না, যতদিন না নবান্নে গেরুয়া পতাকা উড়ছে।
জনজোয়ারে দিলীপের ‘১০০-তে ১০০’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কৌতূহল ছিল, দিলীপ ঘোষের এই জনসভায় কত মানুষের সমাগম হয়। সেই কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে তিনি এই ‘পরীক্ষা’য় ‘একশোতে একশো’ পেলেন। একই দিনে শিলিগুড়িতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ অনুমতি না পেলেও তাঁর জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু জনসমাগমের নিরিখে দেখা গেল, শুভেন্দুর সভার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ দিলীপ ঘোষের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। এই জনসভার মধ্য দিয়ে দিলীপ ঘোষ আবারও প্রমাণ করলেন যে, দলের অন্দরে তাঁকে ‘একঘরে’ করার চেষ্টা হলেও বাংলার বিজেপিতে তাঁর শিকড় এখনো মজবুত।
বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দিলীপের দৃঢ়তা
কিছুদিন ধরে দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন সস্ত্রীক উপস্থিত থাকা নিয়ে দিলীপ ঘোষ দলের বিরাগভাজন হয়েছিলেন বলে জল্পনা ছিল। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি নাম না করে কিছু দলবদলুদের আক্রমণ করে বলেছিলেন, “ওরা হয়তো ভাবছেন দিলীপ ঘোষ ওদের চরিত্রের।” তিনি আরও বলেন, আজ যারা তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারা একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁচলের তলায় রাজনীতি করেছেন। দিলীপ ঘোষ বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তৃণমূলে যাবেন এমনটা যারা ভেবেছিল, তারা ভুল। দিলীপ আছেন দিলীপের জায়গাতেই।
আদি বনাম নব্য দ্বন্দ্বের মাঝে দিলীপের অবস্থান
আজ রাজ্যজুড়ে তিনটি বড় জনসভা ছিল। জনসমাগমের নিরিখে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও, খড়গপুরে দিলীপ ঘোষের জনসভা একরকম শুভেন্দু অধিকারীকে ‘কিস্তিমাত’ করে দিয়েছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এই রাজ্যে বিজেপিতে তাঁর মতো বর্ষীয়ান এবং ‘আদি’ নেতৃত্বের প্রয়োজন অপরিহার্য। বিজেপির অন্দরে ‘আদি’ বনাম ‘নব্য’ দ্বন্দ্ব ছিল, আছে এবং থাকবে। একদিকে দিলীপ ঘোষের মতো দীর্ঘদিনের দলের নেতা, অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর মতো অন্য দল থেকে আসা ‘নব্য’ নেতারা। দীর্ঘ কয়েক মাসের জল্পনা-কল্পনার পর দিলীপের আজকের এই জনসভা এবং তাতে এই জনজোয়ার প্রমাণ করে দেয় যে, দিলীপের কোনো পদের প্রয়োজন হয় না। তিনি যেখানেই যাবেন সেখানেই একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং জনপ্রিয় নেতার সম্মান পাবেন। এই জনসভা দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে এক নতুন দিশা দেখাল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।