২১শে জুলাইয়ের ছায়া, সরকারি স্কুলে ভিন্ন ছবি, কোথাও ছুটি, কোথাও মিড ডে মিল রাঁধলেন প্রধান শিক্ষক!

তৃণমূলের মেগা সমাবেশ ২১শে জুলাই উপলক্ষে কলকাতার সরকারি স্কুলগুলোতে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। যদিও এই দিন স্কুল বন্ধ বা অর্ধদিবস ছুটি সংক্রান্ত কোনো সরকারি বিজ্ঞপ্তি ছিল না, তবুও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বহু স্কুলেই উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। কোথাও ক্লাসরুম ফাঁকা, কোথাও সময়ের আগেই ছুটি, আবার কোথাও প্রধান শিক্ষক নিজেই ধরলেন রান্নার খুন্তি – ধর্মতলার সমাবেশের রেশ শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

অর্ধদিবস ছুটি ও যানজটের আতঙ্ক

ইটিভি ভারতের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে সরকারি স্কুলগুলির বিচিত্র ছবি। টাকি গার্লস স্কুলে অর্ধদিবস ছুটি দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানান, ট্রেনে আসা শিক্ষিকারা উপস্থিত থাকলেও বাসে আসা পাঁচজন যানজটের আশঙ্কায় আসেননি। পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য – একাদশ-দ্বাদশে চারজন এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে মাত্র আটজন। তিনি বলেন, “আজ পুরো স্কুল করছি না। এমন সময় ছুটি দেওয়া হবে যাতে সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছতে পারে। তাই দেড়টায় স্কুল ছুটি দেওয়া হচ্ছে।”

মিড ডে মিলে প্রধান শিক্ষকের অবদান

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে নারায়ণ দাস বাঙুর মাল্টিপারপাস স্কুলে। ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে রাঁধুনিরা অর্ধদিবস ছুটি নেওয়ায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া নিজেই পড়ুয়াদের জন্য মিড ডে মিল রান্না করেন। তাকে সাহায্য করেন অন্যান্য শিক্ষকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ এদিন বেলা সাড়ে তিনটেয় স্কুল ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, “আমার দুপুরে ২৫ শতাংশ এবং সকালে ২৮ শতাংশ পড়ুয়ারা এসেছে। গত বছর ২১শে জুলাইয়ের থেকে এবার পড়ুয়াদের উপস্থিতি কম। শিক্ষকদের মধ্যে মোট ৮৫ শতাংশ উপস্থিত আছেন। মিড ডে মিলের রাঁধুনিরা আজ শুধু ভাত-ডাল করেছেন। বাকি ধোকার ডালনা আমি ও শিক্ষকরা মিলে রান্না করলাম।”

পার্ক ইনস্টিটিউশন ও রঘুমহল আর্য বিদ্যালয়ের চিত্র

শ্যামবাজারের কাছে পার্ক ইনস্টিটিউশনেও একই ছবি। ক্লাসে শিক্ষক থাকলেও পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র তিনজন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ সারাদিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক কম। সব মিলিয়ে ৭৫ জন এসেছে। শিক্ষক শিক্ষিকারা এসেছেন স্কুলে। রাস্তায় যানজটের সমস্যা হতে পারে, তাই পড়ুয়ারা কম এসেছে।” অন্যদিকে, কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি স্কুল রঘুমহল আর্য বিদ্যালয় এদিন বন্ধ রাখা হয় বলে জানান স্কুলের নিরাপত্তারক্ষী ভোলা প্রসাদ।

বিজেপির সমালোচনা: ‘অলিখিত চাপ ও আতঙ্ক সৃষ্টি’

সরকারি স্কুলগুলির এই ভিন্ন চিত্র নিয়ে বিজেপি তীব্র নিন্দা করেছে। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা অভিযোগ করেন, “স্কুল বন্ধের দুটো কারণ আছে। অলিখিতভাবে তৃণমূলের তরফে চাপ দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলোকে, যাতে স্কুল ছুটি দিয়ে সমাবেশে যোগদান করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভয়ের একটি কারণ তৈরি করা। যানজট, গাড়ি চলবে না এই আশঙ্কা অনেকেই করেছেন। আর সেই থেকেই আতঙ্ক সৃষ্টি করাই তৃণমূলের কাজ। কখনও এটা পরোক্ষ আবার কখনও প্রত্যক্ষভাবে করছে তারা।”

কেন্দ্রীয় সরকার ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে কোনও ছুটির বিজ্ঞপ্তি না দিলেও, তৃণমূলের শহীদ দিবসের প্রভাব যে শহরের শিক্ষাব্যবস্থায় স্পষ্ট ছিল, তা দিনের এই চিত্র থেকেই পরিষ্কার।