অপারেশন সিঁদুর ও পহেলগাঁও হামলা, সংসদের উত্তাপ, প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে বিরোধীদের অনড় অবস্থান

লোকসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা নিয়ে ১৬ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনায় সম্মতি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এই আলোচনা কবে হবে এবং কে উত্তর দেবেন, তা নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলি অবিলম্বে এই সপ্তাহেই আলোচনা চেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত উপস্থিতি ও জবাবদিহি দাবি করেছেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সরকারি প্রতিনিধিরা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সপ্তাহেই বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। ফলে, তাঁর উপস্থিতিতে আলোচনা কেবল আগামী সপ্তাহেই সম্ভব। সরকারের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। তাঁদের যুক্তি, এই সপ্তাহের সরকারি এজেন্ডায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের দাবি উল্লেখ করা হয়নি। তাঁরা আরও জোর দিয়ে বলেছেন যে, আলোচনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীকেও উপস্থিত থাকতে হবে। কিছু বিরোধী সদস্য বিহারের ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস এবং মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়েও বিতর্কের দাবি তুলেছেন।
সোমবার, বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই বারবার মুলতুবি হয়েছে লোকসভার কার্যক্রম। বিরোধীরা ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার দাবিতে তীব্র হট্টগোল ও স্লোগান দিতে থাকেন। এটি ছিল দিনের চতুর্থবারের মতো অধিবেশন মুলতুবি। তৃতীয় স্থগিতাদেশের পর বিকেল ৪টায় সংসদ পুনরায় শুরু হলে, চেয়ারে থাকা দিলীপ সাইকিয়া সদস্যদের গোয়া বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত একটি বিল গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু বিরোধীরা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনার দাবিতে স্লোগান চালিয়ে যান।
উল্লেখ্য, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর এটাই সংসদের প্রথম অধিবেশন। বাদল অধিবেশনের সূচনাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, যেভাবে ভারতীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দল বিশ্ব দরবারে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছে। তিনি সাংসদদের মধ্যেও সেই ঐক্যের ছবি দেখতে চেয়েছেন। অধিবেশনের শুরুতে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অপারেশন সিঁদুর ১০০ শতাংশ সফল। ভারতীয় সেনার ক্ষমতা, বীরত্ব দেখেছে তামাম বিশ্ব। এবার সংসদের নেতাদেরও ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। এবারের বাদল অধিবেশনটি বিজয়ের উদযাপন। সারা বিশ্ব ভারতের সামরিক শক্তির ক্ষমতা দেখেছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী যে লক্ষ্য সামনে রেখেছিল, তা ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদী নেতাদের দুর্গ।”
প্রধানমন্ত্রীর এমন উচ্চ প্রশংসার পরও বিরোধীরা সংসদে এই বিষয়ে দ্রুত এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোচনার দাবিতে অনড়। তাদের মতে, এটি কেবল একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নয়, এর সঙ্গে দেশের সার্বিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এই নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের টানাপোড়েন আগামী দিনগুলিতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।