মাথার দাম ২ লক্ষ, TMC নেতা খুনের ছ’মাস পর আত্মসমর্পণ করলো মূল অভিযুক্ত

মালদহের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি ও কাউন্সিলর দুলাল সরকারকে খুনের ঘটনায় দীর্ঘ সাড়ে সাত মাসের টানাপোড়েন শেষে অবশেষে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মালদা আদালতে আত্মসমর্পণ করলো মূল অভিযুক্ত বাবলু যাদব। পুলিশের ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পরও অধরা থাকা এই আসামির শুক্রবারের আকস্মিক আত্মসমর্পণ মালদহের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি ইংরেজবাজার থানার মহানন্দা পল্লি এলাকায় নৃশংসভাবে গুলি করে খুন করা হয় দুলাল সরকারকে। ঘটনার পরপরই তাকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ আটজনকে গ্রেফতার করলেও, বাবলু যাদব অধরাই ছিল। পুলিশ জানতে পারে, বাবলু ঘটনার পর থেকেই বিহারে গা ঢাকা দিয়ে ছিল। তার মাথার ওপর ২ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তাতেও কোনো ফল মেলেনি।

আদালতে আত্মসমর্পণ, ৬ দিনের পুলিশি হেফাজত

শুক্রবার, ১৮ জুলাই, বেলা ১১টা নাগাদ মালদা আদালতে আত্মসমর্পণ করে বাবলু যাদব। তার আইনজীবী ত্রিদীপ সিনহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদালত বাবলুকে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আত্মসমর্পণে মামলার তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

নিহত দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি সরকার বাবলু যাদবের আত্মসমর্পণের পর বলেন, “আইন আইনের পথে চলছে। আমার আইনে বিশ্বাস আছে। পুলিশ প্রশাসন আশা করি তার কাজ করছে। যেটা ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা শাস্তি পাবে আর তার জন্য যা যা করণীয় প্রশাসন করছে।” তার কথায়, আইনের প্রতি তার আস্থা অটুট।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া: আইনের শাসন বনাম রাজনীতির চাল?

বাবলু যাদবের আত্মসমর্পণ ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। দক্ষিণ মালদা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “হঠাৎ করে বাবলা সরকার খুনের আসামি বাবলু যাদব আদালতে আত্মসমর্পণ করলো। বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় সকল আসামি পুলিশের আওতায় এল। এখন এই ঘটনার নতুন কোনো মোড় নেয় কিনা সেদিকে জেলাবাসী তাকিয়ে রয়েছে।” তার কথায়, এই আত্মসমর্পণের পেছনে কোনো রাজনৈতিক চাল থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

অন্যদিকে, তৃণমূল মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু এই ঘটনাকে বাংলার আইনের শাসনের বিজয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলায় আইনের শাসন রয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে আইনের শাসন নেই। বাংলার পুলিশের তৎপরতার জন্যই অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করেছে।” তার মতে, পুলিশের ধারাবাহিক চেষ্টার ফলেই বাবলু যাদব আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে।

এই আত্মসমর্পণের পর দুলাল সরকার হত্যা মামলার তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, এবং এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা, তা জানতে মালদহের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।