AI-ব্যবহার শুরু করলো নেটফ্লিক্স, খরচ কমাতে প্রথমবারের মত নেওয়া হলো এই উদ্যোগ

মার্কিন স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স এবার খরচ কমাতে এবং দ্রুত কাজ সারতে তাদের নিজস্ব টিভি শো-তে প্রথমবারের মতো জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করেছে। প্লাটফর্মটি জানিয়েছে, আর্জেন্টিনার বিজ্ঞান কল্পকাহিনি নির্ভর শো ‘দ্য ইটারনটস’-এর একটি মূল দৃশ্যে এআই দিয়ে তৈরি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
নেটফ্লিক্সের সহ-প্রধান নির্বাহী টেড সারানডোস জানিয়েছেন, প্রম্পটের ভিত্তিতে ভিডিও ও ছবি তৈরি করতে পারে এমন এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘দ্য ইটারনটস’-এর একটি ভবন ধসে পড়ার দৃশ্য তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রোডাকশন টিম দ্রুত ও অনেক কম খরচে এসব দৃশ্য শেষ করতে পেরেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিনোদন শিল্পে জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার একটি বিতর্কিত বিষয়। অনেকেই মনে করেন, এই প্রযুক্তি অন্যের কাজ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করে নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির কারণে মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে।
আর্থিক সাফল্যের মধ্যেই এআইয়ের ব্যবহার
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেটফ্লিক্স সম্প্রতি তাদের আর্থিক সাফল্যের ঘোষণা দিয়েছে। এই বছরের জুন মাস পর্যন্ত তিন মাসে তাদের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে লাভ ২০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১০ কোটি ডলার। এই আয় বৃদ্ধির ঘোষণার পরই সারানডোসের এআই ব্যবহারের মন্তব্যটি এল।
নেটফ্লিক্স আরও জানিয়েছে, তাদের এই প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফরম্যান্সের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়ান থ্রিলার ‘স্কুইড গেইম’-এর তৃতীয় ও শেষ সিজনের সাফল্য। এই সিজনটি এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ২০ লাখ বার দেখা হয়েছে।
নেটফ্লিক্স এআই ব্যবহার করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সারানডোস বলেছেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ছোট বাজেটের প্রোডাকশনগুলোতেও উন্নতমানের ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দ্য ইটারনটস’ শোতে যে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করা হয়েছে, তা বুয়েনস আইরেসে একটি ভবন ধসে পড়ার দৃশ্য ১০ গুণ দ্রুত শেষ করতে প্রোডাকশন টিমকে সাহায্য করেছে। প্রচলিত স্পেশাল ইফেক্টস টুল ব্যবহার করলে এত দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হতো না। সারানডোসের মতে, “এ খরচ ওই বাজেটের শোয়ের জন্য সম্ভব ছিল না। এ দৃশ্যটিতে আসলে নেটফ্লিক্সের কোনো মূল সিরিজ বা ছবিতে প্রথমবারের মতো জেনারেটিভ এআই দিয়ে তৈরি চূড়ান্ত ভিডিও দেখানো হয়েছে, যেখানে এর ফলাফল দেখে নির্মাতারা খুশি ছিলেন।”
হলিউডের ধর্মঘট ও এআই বিতর্ক
বিবিসি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের হলিউড ধর্মঘটের সময় এআই ছিল অন্যতম প্রধান উদ্বেগের বিষয়। তিন মাসের এই ধর্মঘটের সময় ‘স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড-আমেরিকান ফেডারেশন অফ টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস’ ইউনিয়ন এআই ব্যবহারের ওপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছিল। ওই সময় শিল্পের কিছু মানুষ চলচ্চিত্রে এআই ব্যবহারের সমালোচনা করে এটিকে তাদের কাজের প্রতি অবমাননাকর বলেও মন্তব্য করেন।
সেই সময় চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের তৈরি সোরার মতো বিভিন্ন এআই টুল চালু হচ্ছিল, যা সাধারণ টেক্সট প্রম্পট থেকে অসাধারণ মানের ভিডিও তৈরি করতে পারে। এআইয়ের এমন কাজ দেখে সবাই মুগ্ধ হলেও, এই প্রযুক্তি মানুষের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও তৈরি করেছে।
এদিকে, সিঙ্গাপুরের অ্যানিমেশন স্টুডিও ‘ক্রেভএফএক্স’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভিয়ার ইউন বলেছেন, নেটফ্লিক্সের জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের বিষয়টি আশ্চর্যের কিছু নয়। কারণ আরও অনেক বড় স্টুডিও এই প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছে। তিনি বলেন, জেনারেটিভ এআই ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট আর্টিস্টদের বিভিন্ন ধারণা জীবন্ত করতে ব্যবহার করা ডিজিটাল টুলগুলোর তালিকায় একটি নতুন সংযোজন মাত্র। তাঁর মতে, “এ যেন কেবল সময়ের ব্যাপার, যেখানে এআই অবশ্যই ছোট আকারের বিভিন্ন স্টুডিওকে বড় বাজেটের মতো চমৎকার ভিজ্যুয়াল তৈরির সুযোগ করে দেবে। তবে শেষ পর্যন্ত শিল্পীই সিদ্ধান্ত নেবেন চূড়ান্ত ছবিটিতে কী থাকবে, এআই নয়।”