“কাজের চাপ…’ লেখা সুইসাইড নোটে”-অফিসেই আত্মঘাতী হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার

কাজের অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক সিনিয়র অফিসার। মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার বারামতিতে এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত ৪৮ বছর বয়সী শিবশঙ্কর মিত্র ওই ব্যাঙ্কেরই চিফ ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর এই আত্মহনন কর্পোরেট জগতে কাজের মানসিক চাপ এবং তার ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আকর্ষণীয় বেতন আর স্থায়ী চাকরির আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক নির্মম বাস্তবতাই যেন আরও একবার সামনে চলে এল।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার রাতে শিবশঙ্কর মিত্র বারামতির ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরে, নিজের কেবিনেই আত্মহত্যা করেন। সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় শুধু ব্যাঙ্ক কর্মীদের মধ্যেই নয়, সমগ্র কর্পোরেট জগতেই শোরগোল পড়ে গেছে।
সুইসাইড নোটে কাজের চাপের উল্লেখ:
মৃতের পরিবারের দাবি, শিবশঙ্কর দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতা এবং লাগামহীন কাজের চাপে ভুগছিলেন। গত ১১ জুলাই তিনি ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে ইস্তফাও দিয়েছিলেন, যদিও তখন তাঁর নোটিশ পিরিয়ড চলছিল। পুলিশ জানিয়েছে, শিবশঙ্কর মিত্র একটি সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছেন, যেখানে তিনি স্পষ্টত কাজের অতিরিক্ত চাপের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি। পুলিশ আরও জানিয়েছে, কিছুদিন ধরেই শিবশঙ্কর মিত্র শারীরিক সমস্যার জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পুলিশের তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কের কাজ শেষ হওয়ার পর শিবশঙ্কর অন্যান্য কর্মীদের বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং জানান যে তিনি নিজে অফিস বন্ধ করে যাবেন। এরপর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীও চলে যান। পুলিশের দাবি, শিবশঙ্কর মিত্র এর আগেই তাঁর এক সহকর্মীকে দিয়ে একটি দড়ি আনিয়েছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সেই দড়ি ব্যবহার করেই তিনি আত্মহত্যা করেন।
উদ্বিগ্ন পরিবারের খোঁজ:
রাত বারোটার পরেও শিবশঙ্কর বাড়ি না ফেরায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। ফোনেও রিং হচ্ছিল না। উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁর স্ত্রী নিজেই ব্যাঙ্কে চলে আসেন। ব্যাঙ্কের আলো জ্বলতে দেখে তিনি ভিতরে ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি ব্যাঙ্কের অন্যান্য কর্মীদের খবর দেন। কর্মীরা এসে দরজা খুলে শিবশঙ্করের ঝুলন্ত দেহ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ এবং তদন্ত চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার এমন পরিণতি কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য এবং কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এর আগে কাজের চাপের জেরে এক বহুজাতিক অডিট সংস্থার কর্মীর মৃত্যুর খবরেও শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সংস্থাগুলোর কী ভূমিকা হওয়া উচিত, কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং ব্যবস্থা আছে কিনা, এবং একটি সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার – শিবশঙ্কর মিত্রের আত্মহত্যার ঘটনা যেন সেই প্রশ্নগুলোই আরও একবার জোরালোভাবে তুলে ধরল।