BigNews: ফের বৃষ্টি-ধসে বিপর্যস্ত সিকিমের জাতীয় সড়ক, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা

ফের ধস, ফের অবরুদ্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH-10)। শুক্রবার থেকে কালিম্পং ও সিকিমগামী এই প্রধান লাইফলাইন আবারও দিনভর বন্ধ থাকল, যা শনিবারও স্বাভাবিক হয়নি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই জাতীয় সড়কের বারবার বিপর্যস্ত হওয়া কেবল স্থানীয়দের নিত্য ভোগান্তি নয়, পর্যটন নির্ভর সিকিম ও কালিম্পংয়ের অর্থনীতিতেও গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে দেখভালের দায়িত্ব যাওয়ার পরও কেন রাস্তার এই বেহাল দশা?

একসময় রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বর্তমানে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের (NHIDCL) দায়িত্বে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকেও নিয়মিত ধস নামতে থাকায় কাজ এগোচ্ছে না বলে জানানো হচ্ছে। এই অজুহাত কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত অক্টোবরের পর থেকে এই সড়কের ক্রমাগত বিপর্যস্ত অবস্থা কেবল প্রাকৃতিক কারণের ফল, নাকি পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও এর জন্য দায়ী – তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

বারবার একই চিত্র, বাড়ছে ঝুঁকি

দিন কয়েক আগেই সেবক ও কালিঝোরার মাঝে জাতীয় সড়কে বোল্ডার পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছিল, এমনকি একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার বিরিকদাড়ায় ধস নেমেছে, যা এই এলাকার একটি পরিচিত সমস্যা। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ যখন প্রচুর যানবাহন যাতায়াত করছিল, তখনই প্রচণ্ড গতিতে পাহাড় ভেঙে মাটি, পাথর পড়তে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা একে ‘মাউন্টেন স্লাইড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা পাহাড়ের অনেকটা অংশ ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত দেয়। সৌভাগ্যবশত, ধস নামতে দেখে দ্রুত যানবাহন সরিয়ে নেওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং ও সিকিমের সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পর্যটন শিল্পের ওপর প্রভাব

এই ধস কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করছে না, উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পের ওপরও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। একদিকে যখন সিকিমে টানা বৃষ্টি ও ধসের জেরে পর্যটকরা আটকা পড়ছেন এবং সেনাবাহিনীকে উদ্ধারকার্যে নামতে হচ্ছে, তখন ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের এই বেহাল দশা পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ লাইন, ঘুরপথে যাত্রা এবং অনিশ্চিত ভ্রমণ – এসবই পর্যটকদের এই অঞ্চলে আসতে নিরুৎসাহিত করছে। পর্যটনই যেখানে উত্তর সিকিম এবং কালিম্পংয়ের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেখানে এই ধরনের বিপর্যয় স্থানীয়দের জীবন-জীবিকাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

বর্তমানে কিছু গাড়ি তিস্তাবাজার, পেশক রোড, দার্জিলিং হয়ে ঘুরপথে চলাচল করছে। আবার শিলিগুড়ি থেকে কিছু বাস সেবক, ওদলাবাড়ি, গরুবাথান হয়ে কালিম্পংয়ে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু এই বিকল্প রাস্তাগুলো সময়সাপেক্ষ এবং অতিরিক্ত ব্যয়বহুল। স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সরকারের উচিত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে পর্যটন এবং স্থানীয় অর্থনীতি আর বিপর্যস্ত না হয়।