“মা ধোকলা খান না…”-মোদীর কালী-জয়ধ্বনিতে খোঁচা মহুয়ার, ফের পুরনো বিতর্ক শুরু

দুর্গাপুরের নির্বাচনী সভায় বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। এতদিন বিজেপি শিবিরে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিই প্রধানত শোনা যেত, তবে রামের পরিবর্তে কালী ও দুর্গার নামোচ্চারণকে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালি ভোটারদের মন জয়ের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে। প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করতে আসরে নেমেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেছেন, বাঙালি ভোট টানতে প্রধানমন্ত্রী “দেরি করে ফেলেছেন” এবং “মা কালী ধোকলা খান না”।

মোদী ও মা কালী-দুর্গা:
শুক্রবার দুর্গাপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি দেন, তখন তা অনেককেই অবাক করে। বিজেপির চিরাচরিত ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের বাইরে এসে এই নতুন ধ্বনিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বাংলার সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় আবেগকে সম্মান জানানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। এর মাধ্যমে বিজেপি নিজেদেরকে বাঙালির দল হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মহুয়ার তীক্ষ্ণ কটাক্ষ:
প্রধানমন্ত্রীর এই কৌশলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেন, “বাঙালি ভোটের জন্য মা কালীকে ডাকতে একটু দেরি করে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। উনি (মা কালী) ধোকলা খান না আর কখনও খাবেনও না।” মহুয়া ধোকলার প্রসঙ্গ টেনে মোদীকে কটাক্ষ করেছেন, কারণ ধোকলা গুজরাটের একটি জনপ্রিয় খাবার এবং গুজরাট প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য। এর মাধ্যমে মহুয়া বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান।

মহুয়ার অতীত ‘কালী বিতর্ক’:
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে মহুয়া মৈত্র নিজেই মা কালীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে এসেছিলেন। পরিচালক লীনা মানিমেকালাইয়ের তথ্যচিত্রের একটি পোস্টারে দেবী কালীকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখানোর ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেই সময় মহুয়া বলেছিলেন, “মা কালী আমার কাছে মাংস ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা এক দেবী। দেব-দেবীকে কে কী ভাবে পুজো করবেন, কী ভাবে কল্পনা করবেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়। তারাপীঠ সহ অনেক জায়গায় ভগবানকে পুজোয় হুইস্কিও দেওয়া হয়।” মহুয়ার এই মন্তব্য সে সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর কালী-দুর্গার শরণাপন্ন হওয়া এবং মহুয়া মৈত্রর পাল্টা কটাক্ষ – এই ঘটনাপ্রবাহে বাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের গুরুত্ব আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।