নিক্কো পার্কে রাহুলের মৃত্যুতে রহস্যের গন্ধ, থানায় অভিযোগ দায়ের করলো পরিবার

নিক্কো পার্কের ‘নায়াগ্রা ফলস’-এ স্নান করতে নেমে রাহুল দাস নামে এক যুবকের আকস্মিক মৃত্যুতে রহস্যের কালো মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। ছেলের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। এরই মধ্যে ঘটনার মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ্যে এসেছে, যা এই রহস্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ঘটনার বিবরণ ও পরিবারের অভিযোগ:
জানা গিয়েছে, রাহুল দাস তার কলেজের ছয় বন্ধুর সঙ্গে নিক্কো পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ‘নায়াগ্রা ফলস’-এর জলে স্নান করার সময় আচমকা জ্ঞান হারান তিনি। তার বন্ধুরা তড়িঘড়ি তাকে জল থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাহুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রকাশ্যে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, জ্ঞান হারানো রাহুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান রাহুলের বাবা-মা।
রাহুলের বাবা সত্যজিৎ দাস ছেলের মৃত্যুতে গভীর রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ছেলে একেবারে সুস্থ ছিল। হাসিমুখে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আচমকাই দুপুরে ফোন আসে, ছেলে অচৈতন্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। গিয়ে দেখি, ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি।” এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি রয়েছে বলেই মনে করছেন মৃত যুবকের পরিবারের সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, ওয়াটার পার্কের মতো সংবেদনশীল স্থানে যে ধরনের পর্যাপ্ত নজরদারি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল, নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে তার কোনো রকম ব্যবস্থা ছিল না। আর এই নিরাপত্তা জনিত ত্রুটির কারণেই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের দাবি।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও পুলিশের তদন্ত:
যদিও এই বিষয়টি নিয়ে নিক্কো পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বুধবার পার্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ রায় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, “কর্তব্যরত লাইফ গার্ডরা গিয়ে দেখেন, রাহুল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে রাইডের সিঁড়ি থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রাহুলের মৃত্যুতে পার্ক কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই।
বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না বলেই পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে রাহুলের বন্ধুদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের কি কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল, নাকি এই মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো রহস্য? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশের তদন্তের পরই এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।