ডেবরার সেই গ্রামে ফের ২ বছরের শিশুর মৃত্যু, এবারও বিডিওর জবাব, ‘রাস্তার কারণে নয়’

আবারও শিরোনামে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকের লোয়াদা কাঁকড়া মোহনপুর গ্রাম। দেড় মাস আগে বেহাল রাস্তার কারণে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগের পর, এবার দু’বছর তিন মাসের এক শিশুর করুণ মৃত্যুতে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। পরিবার ও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ছোট্ট সুস্মিতা মুর্মু অসুস্থ হলেও, রাস্তার চরম দুরবস্থার কারণে তাকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। যখন হাসপাতালে পৌঁছনো গেল, ততক্ষণে সব শেষ।

বৃহস্পতিবার ভোর ৩টে নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সুস্মিতা। পরিবারের দাবি, কাদা আর পাঁকে ভরা গ্রামের রাস্তা এতটাই বেহাল যে, সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে মারাত্মক দেরি হয়ে যায়। যখন ডেবরা হাসপাতালে পৌঁছানো হলো, চিকিৎসকরা ছোট্ট শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় শুধু পরিবার নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও বলা হয়েছে যে, এই মৃত্যু রাস্তার জন্য নয়, বরং বাড়িতে কিছু খাওয়ানোর সময়ই এটি ঘটেছে। তবে পরিবার এবং গ্রামবাসীরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের একটাই দাবি, রাস্তার কারণেই এই অকালমৃত্যু।

পঞ্চায়েত সদস্যকে বেঁধে রাখল গ্রামবাসী:

ঘটনার পর পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, দুপুর নাগাদ স্থানীয় বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য অভিজিৎ সিং মৃতের বাড়িতে দেখা করতে গেলে, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাকে দড়ি দিয়ে একটি গাছে বেঁধে রাখেন। গ্রামবাসীদের স্পষ্ট দাবি, যতক্ষণ না গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে কেউ এসে তাদের সমস্যার সমাধান করছেন, ততক্ষণ পঞ্চায়েত সদস্যকে ছাড়া হবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর গড়িয়ে গেলেও পুলিশ গ্রামে ঢুকতে পারেনি। বিকেল ৫টার পরে পুলিশ গ্রামে প্রবেশ করে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে।

অভিশপ্ত ‘কাঁকড়া মোহনপুর’ রাস্তা:

ডেবরা ব্লকের ৯ নম্বর ষাঁড়পুর লোয়াদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাঁকড়া মোহনপুর গ্রামের রাস্তা যেন এক জীবন্ত নরক। পুরো রাস্তাটাই পাঁক আর কাদায় ভর্তি। সাধারণ গাড়িঘোড়া তো দূরের কথা, মানুষ ঠিকভাবে হেঁটেও যেতে পারেন না। প্রায় দেড় মাস আগে এই গ্রামেরই বাসিন্দা বাদল মাণ্ডি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেহাল রাস্তার কারণে অ্যাম্বুলেন্স না আসায় তাকে খাটিয়ায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছিল।

প্রশাসনের একই অজুহাত:

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেছেন, “মৃত অবস্থাতেই শিশুটিকে ডেবরা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সম্ভবত বাড়িতে কিছু খাওয়ানোর সময়ই এই ঘটনা ঘটে।” ডেবরার বিডিও প্রিয়ব্রত রাঢ়ি এই সময় অনলাইনকে জানিয়েছেন, “আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তবে আমি যতদূর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রাস্তার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়নি। বাড়িতে দুধ বা ওই ধরনের কিছু খাওয়ানোর সময়েই মৃত্যু হয়েছে। মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”

উল্লেখ্য, বাদল মাণ্ডির মৃত্যুর পরেও বিডিও একই কথা বলেছিলেন, “এই মৃত্যু রাস্তার কারণে হয়নি। উনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন।” একই সঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, কাঁকড়ার ওই কাঁচা রাস্তাটি ঢালাই করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গ্রামবাসীর এখন একটাই প্রশ্ন, আর কত প্রাণ গেলে তবে প্রশাসন তাদের বেহাল রাস্তার দিকে নজর দেবে? এই ক্ষোভ, আতঙ্ক আর অসহায়তা নিয়েই দিন গুনছেন কাঁকড়া মোহনপুর গ্রামের মানুষ।