ফাঁসির সাজা দেয় নিম্ন আদালত, ৩ অভিযুক্তই বেকসুর খালাস হাইকোর্টে, জানুন কোন মামলা?

২০১৪ সালের চাঞ্চল্যকর শিয়ালদহ হত্যাকাণ্ডে নিম্ন আদালতের ফাঁসির সাজা বাতিল করে তিন অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন তাদের রায়ে পুলিশের তদন্তে গুরুতর গাফিলতির কথা উল্লেখ করেছে, যার ফলেই এই মামলার মোড় সম্পূর্ণ ঘুরে গেল।

২০১৪ সালের ২০ মে বিকেলে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং লটে একটি দড়ি দিয়ে বাঁধা লেপ, একটি বড় ট্রলি ব্যাগ এবং একটি স্কুল ব্যাগ বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কর্তব্যরত জিআরপি কর্মীরা বিষয়টি শিয়ালদহ স্টেশন থানায় জানালে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তল্লাশিতে বেরিয়ে আসে এক মর্মান্তিক সত্য – ব্যাগ দুটি এবং লেপের ভেতরে একজন মহিলার খণ্ডবিখণ্ড মৃতদেহ রয়েছে। পরে মৃতদেহটি জয়ন্তী দেবের বলে শনাক্ত করা হয়।

তদন্ত ও নিম্ন আদালতের রায়:

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে মৃত জয়ন্তী দেবের সঙ্গে তার স্বামী সুরজিৎ দেবের দীর্ঘদিনের বিবাদ চলছিল এবং তারা আলাদা থাকতেন। সন্দেহের বশে, এই খুনের ঘটনায় জয়ন্তীর স্বামী সুরজিৎ দেব, তার এক বান্ধবী লিপিকা পোদ্দার এবং সঞ্জয় বিশ্বাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। মামলার দীর্ঘ শুনানির পর, শিয়ালদহ ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট এই তিন জনকেই ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল।

হাইকোর্টে আপিল ও চূড়ান্ত রায়:

২০১৯ সালে, নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিযুক্তরা কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করে। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। দীর্ঘ শুনানি শেষে এদিন হাইকোর্ট তিন অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেয়।

বিচারপতিরা তাদের রায়ে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, “তদন্তকারী পুলিশ কর্মীরা তদন্ত সুষ্ঠুভাবে করে উঠতেই পারেন নি।” অর্থাৎ, পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়ায় এতটাই ত্রুটি ছিল যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। এই রায় আবারও পুলিশের তদন্তের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল এবং একইসাথে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ায় উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিল।