অসমে বাঙালি উচ্ছেদ বিতর্কে উত্তাল রাজনীতি, ধুবুড়িতে বিক্ষোভ, তৃণমূল-বিজেপি তরজা তুঙ্গে

অসমের ধুবুড়ি জেলায় বাঙালি উচ্ছেদের নোটিস ঘিরে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে, যা এখন রাজ্য ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ধুবুড়ির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তা তৈরির জন্য অসম সরকারের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে স্থানীয় বাঙালিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করেছে।
উচ্ছেদ নোটিস ঘিরে বাঙালিদের ক্ষোভ:
ধুবুড়ির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লী, নবীনপাড়া, চন্দননগর এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে উচ্ছেদের নোটিস এসেছে, যার প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অভিযোগ, এই এলাকার বহু বাঙালি পরিবার দীর্ঘকাল ধরে এখানে বসবাস করছে এবং সরকার তাদের পুনর্বাসনের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদের নোটিস দিয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই উচ্ছেদ অভিযানে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে।
তৃণমূলের আক্রমণ: ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠরাই উচ্ছেদের শিকার’
এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। ধুবুড়ির বিক্ষোভের একটি ভাইরাল ভিডিও পোস্ট করে তিনি দাবি করেন, “বিজেপি শাসিত অসমের ধুবুড়িতে এবার বিজেপি ঘনিষ্ঠদেরই উচ্ছেদ করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি ঘনিষ্ঠ বাঙালি হিন্দুদের বাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে, কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়।” তৃণমূল নেতার মন্তব্য, “অসমে বাঙালিদের পরিস্থিতি ভয়াবহ,” যা রাজ্যজুড়ে এক নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল এই ঘটনাকে বিজেপির ‘বাঙালি বিরোধী’ নীতির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
বিজেপির পাল্টা অভিযোগ: ‘নোংরা রাজনীতি’
অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলের এই অভিযোগকে ‘নোংরা রাজনীতি’ বলে পাল্টা আক্রমণ করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে, ধুবুড়িতে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে এবং উচ্ছেদ হওয়া প্রত্যেকেই পুনর্বাসন পাবেন। তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই মানবিক ইস্যুকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে। বিজেপির দাবি, সরকার নিয়ম মেনেই কাজ করছে এবং এতে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
মুখ্যমন্ত্রীর অনমনীয় অবস্থান:
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন বলে জানা গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে, এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে যে বহু বাঙালি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রাজনৈতিক চাপানউতোর:
আসান্ন নির্বাচনের মুখে এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে তরজা, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে বিজেপির ‘উন্নয়ন’-এর বার্তা, অন্যদিকে তৃণমূলের ‘বাঙালিদের অধিকার’ রক্ষার স্লোগান – এই দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অন্যান্য খবর: প্রধানমন্ত্রীর দুর্গাপুর সফর ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
এদিকে, আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফরকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুরে চরম ব্যস্ততা দেখা গেছে বিজেপি নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের মধ্যে। আগামীকাল বিহার থেকে প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপুরে আসছেন। নেহরু স্টেডিয়ামে তাঁর জনসভার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। দোকানদার থেকে পথচারীদের মধ্যে হ্যান্ডবিল বিলি করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য স্নিফার ডগ ও বম্ব স্কোয়াড দিয়ে সভাস্থল পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়কপথে পুলিশের তরফে নিরাপত্তার ট্রায়াল রানও সম্পন্ন হয়েছে।