রোহিঙ্গা বিতর্কে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি, শুভেন্দুর নিশানায় মমতা, ‘রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে পথে নেমেছেন’ অভিযোগ বিরোধী দলনেতার

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে রোহিঙ্গা ইস্যু আবারও এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তাঁর দাবি, ‘রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথে নেমেছেন’, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

শুভেন্দুর বিস্ফোরক অভিযোগ:

বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তোলেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে এখন ‘বিহার মডেল’ প্রয়োজন।” তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং প্রশাসনিক কঠোরতার উদাহরণ টেনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী দলনেতার মূল অভিযোগ হলো, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন এবং তাদের রক্ষা করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।

শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথে নেমেছেন।” এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সুরক্ষা এবং রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলনেতা দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি এবং তাদের তথাকথিত ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছেন। আজকের মন্তব্য সেই অভিযোগের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া:

শুভেন্দু অধিকারীর এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, অতীতে তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার কথা বলে এসেছেন এবং তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি মানবিকতার প্রশ্ন বলেই দাবি করেছেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, শুভেন্দু অধিকারীর এই আক্রমণাত্মক মন্তব্য আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলিকে সামনে এনে তিনি একদিকে যেমন সীমান্ত সুরক্ষায় রাজ্যের ব্যর্থতাকে তুলে ধরতে চাইছেন, তেমনই ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ককে সংহত করার চেষ্টা করছেন।

রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন:

রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের জন্য দীর্ঘদিনের একটি চ্যালেঞ্জ। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে প্রায়শই অভিযোগ করা হয় যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা রাজ্যের জনসংখ্যার বিন্যাসে পরিবর্তন আনছে এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি করছে। শুভেন্দু অধিকারীর আজকের মন্তব্য সেই উদ্বেগকেই আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ কীভাবে মোকাবিলা করে এবং রাজ্যের সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে কী বার্তা দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আগামী দিনে এই ইস্যু রাজ্য রাজনীতিতে আরও বড় বিতর্কের জন্ম দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।