দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে মোদীর মেগা সভা, বাড়তি তৎপরতায় বিজেপি, সুকান্তর অভিনব জনসংযোগ কৌশল

রাত পোহালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুর সফর। আগামীকাল, শুক্রবার দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। এই সভাকে কেন্দ্র করে রাজ্য বিজেপির মধ্যে যে অভূতপূর্ব তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তা সাম্প্রতিককালে বিরল। আলিপুরদুয়ারের আগের সভার তুলনায় দুর্গাপুরের এই সমাবেশ নিয়ে বিজেপি যেন কোমর বেঁধে নেমেছে।
তৎপরতায় শীর্ষ নেতৃত্ব:
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতিতে বিজেপি তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। দলের রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরে ঘাঁটি গেড়েছেন। মোদীর সভার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন সুনীল বনসাল, যিনি গত এক সপ্তাহ ধরে দুর্গাপুরে একাধিক বৈঠক করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের কাজ খতিয়ে দেখছেন।
রাজ্য বিজেপির বর্তমান সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার মধ্যে দুর্গাপুরে পৌঁছে প্রস্তুতির কাজ পর্যালোচনা করবেন। এছাড়াও, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ, সৌমেন্দু অধিকারী, জ্যোতির্ময় মাহাতো-র মতো শীর্ষ নেতারা সপ্তাহখানেক ধরেই দুর্গাপুরে যাতায়াত করে প্রস্তুতি পর্বের তত্ত্বাবধান করছেন।
সুকান্ত মজুমদারের অভিনব জনসংযোগ:
এই সভার প্রস্তুতিতে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও উত্তরপূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের ভূমিকা বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। তাঁর সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিনি বেনাচিতি এলাকায় পায়ে হেঁটে ঘুরবেন। সেখানে সাধারণ মানুষকে সরাসরি মোদীর সভার জন্য নিমন্ত্রণ জানাবেন। ওই এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের কাছে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবেন, সকলে যেন প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে নেহরু স্টেডিয়ামের সভাস্থলে আসেন। এই ধরনের ব্যক্তিগত জনসংযোগ কৌশল সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর সভার আগে খুব একটা দেখা যায় না।
সড়কপথে যাত্রা ও ‘রোড শো’র বিশেষ চমক:
জানা গেছে, অন্ডাল থেকে দুর্গাপুরের সভাস্থলের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে না গিয়ে সড়ক পথেই দুর্গাপুরে যাবেন। তবে, তাঁর এই যাত্রাপথে একটি বিশেষ চমক থাকছে। সভাস্থলের শেষ তিন কিলোমিটার তিনি গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে নাড়তে উপস্থিত জনতার সঙ্গে জনসংযোগ করতে করতে যাবেন। এটি এক প্রকার ছোট ‘রোড শো’ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি সংযোগের সুযোগ করে দেবে।
তৃণমূলের কটাক্ষ:
দুর্গাপুরের সভা নিয়ে বিজেপির এই বাড়তি তৎপরতা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করেছে। তাদের মতে, এটি বিজেপির রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং এর মাধ্যমে তারা কোনো বিশেষ সুবিধা পাবে না।
তবে, এই সভা যে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা তাদের প্রস্তুতির ধরন থেকেই স্পষ্ট। আসন্ন নির্বাচন বা রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে দুর্গাপুরের এই জনসভা বিজেপির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল পর্যন্ত।