বিরাটিতে মর্মান্তিক ঘটনা, ছেলের গ্রেফতারির অপমানে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে বাবা-মায়ের আত্মহত্যা, নিমতা জুড়ে শোকের ছায়া

ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে গ্রেফতারির অপমান সইতে না পেরে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন বাবা-মা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদা-বনগাঁ শাখার বিরাটি স্টেশনের অদূরে, যেখানে ট্রেনের ধাক্কায় দম্পতির দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এই ঘটনায় নিমতা থানা এলাকার পশ্চিম প্রতাপগড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপমানের বলি এক পরিবার

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত দম্পতির নাম জগন্নাথ দাস (৪৮) ও মণিকা দাস (৪১)। মৃত দম্পতির বাড়ি নিমতা থানা এলাকার পশ্চিম প্রতাপগড়ে। জগন্নাথ দাস স্বাস্থ্য দফতরে গাড়ি চালাতেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে জয়ন্ত ওরফে শুভ।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, বুধবার সকালে জগন্নাথ দাসের অফিস থেকেই তাঁর ছেলে জয়ন্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই অপমানজনক পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেননি জগন্নাথ। এই তীব্র অভিঘাত সামলাতে না পেরেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চরম পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

শিয়ালদা আদালতে ছেলের কান্না

এদিকে, বুধবার শিয়ালদা আদালতে বাবা-মায়ের এমন মর্মান্তিক পরিণতি শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলে জয়ন্ত। তাঁর পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, জয়ন্তকে ফাঁসানো হয়েছে। এই ঘটনার পর পুরো পরিবারই এক চরম মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

প্রেম, প্রতারণা এবং গ্রেফতারির ঘটনা

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দম্পতির ছেলে জয়ন্ত তিন মাস আগে বাবার অফিসেই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। গত এপ্রিল মাসে সোদপুরের এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

কিন্তু গোল বেঁধেছিল অনেক আগে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত দু’বছর ধরে মুরারিপুকুরের বাসিন্দা অন্য এক মহিলার সঙ্গে জয়ন্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছরের নভেম্বর মাসে সেই প্রেমিকা যুবকের বিরুদ্ধে মানিকতলা থানায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সময় পুলিশ জয়ন্তকে থানায় ডেকে সতর্ক করে। এরপর সবকিছু শান্ত ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১৪ই জুলাই ওই মহিলা জানতে পারেন, তাঁর প্রেমিক জয়ন্তের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এও জানা যায়, সহবাসের ফলে সেই প্রেমিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন।

এর পরেই গর্ভবতী অবস্থায় ওই মহিলা পুনরায় মানিকতলা থানায় জয়ন্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার পুলিশ জয়ন্তকে গ্রেফতার করে। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই জয়ন্ত দাসকে নিমতা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সে জেল হেফাজতে রয়েছে।”

মৃত্যুর শেষ মুহূর্তের ঘটনাপ্রবাহ

পুলিশের দাবি, জয়ন্তের গ্রেফতারির বিষয়টি তাঁর মা মণিকা দাসকে ফোন করে জানানো হয়। খবরটি পাওয়ার পর মণিকা দেবী তাঁর স্বামীকে বিষয়টি জানান। এরপর পরিবারের সদস্যদের অলক্ষ্যে দু’জনেই বিরাটি স্টেশনে চলে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তাঁরা রেললাইন ধরে দুর্গানগর স্টেশনের দিকে প্রায় ৩০০ মিটার হেঁটে যান। এরপর ডাউন শিয়ালদা-ঠাকুরনগর লোকাল আসতে দেখে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন।

পরে তাঁদের ছিন্নভিন্ন দেহ বারাসত জিআরপি উদ্ধার করে। মৃত দম্পতির পরিচয় জানতে রেল পুলিশ দ্রুত বিভিন্ন থানায় ছবিসহ তথ্য পাঠায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জগন্নাথের ভাই বিশ্বনাথ দাস এসে দেহ দুটি শনাক্ত করেন। তাঁর দাবি, “ভাইপো এপ্রিল মাসে বিয়ে করেছিল। আমাদের ধারণা, জয়ন্তের বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক অভিযোগ ওঠায় দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে দাদা-বৌদি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।” এ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে নিহতের পরিবার।

আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়

যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনো বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যেকোনো সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে। টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে।