নিরাপত্তাহীনতায় দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজ? ক্যাম্পাসে পুলিশ পিকেট চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন, আদালতের সতর্ক পর্যবেক্ষণ

কলকাতা শহরের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাউথ কলকাতা ল কলেজ (South Kolkata Law College) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সম্প্রতি এক নিরাপত্তারক্ষীর গ্রেপ্তারি এবং কর্মী সংকটের জেরে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে পুলিশ পিকেটের আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কলেজে সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখারও আর্জি জানানো হয়েছে। হাইকোর্ট রাজ্যকে আগামী ২৪শে জুলাইয়ের মধ্যে এই দুটি আবেদনের উপর তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে।

কেন এই আবেদনের প্রয়োজন?

সাউথ কলকাতা ল কলেজের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে কলেজ ক্যাম্পাসের রক্ষী সংকট নিয়ে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, “একজন নিরাপত্তারক্ষী গ্রেপ্তার। রক্ষী সঙ্কট কলেজে। নতুন করে এজেন্সি মাধ্যমে রক্ষী নিযুক্ত করতে সময় প্রয়োজন। নতুন রক্ষী নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভিতরে পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করে দিক আদালত।” অর্থাৎ, বর্তমান পরিস্থিতিতে কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

আদালতের অবস্থান এবং পরামর্শ:

এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনের পর্যবেক্ষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “কোনও শিক্ষাঙ্গনের ভিতরে পুলিশ রাখার বিরোধী আদালত। রক্ষী নিযুক্ত করুক কলেজ। কে তাদের নিষেধ করেছে।” বিচারপতির এই মন্তব্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশের স্থায়ী উপস্থিতি নিয়ে আদালতের মৌলিক আপত্তির ইঙ্গিত দেয়।

তবে, বিচারপতি কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি বিকল্প পথও বাতলে দিয়েছেন। তিনি পরামর্শ দেন, কলেজ কসবা থানায় নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে আবেদন করতে পারে। এর মাধ্যমে সাময়িক নিরাপত্তার অভাব পূরণ করা যেতে পারে, অথচ শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতাও বজায় থাকবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের আবেদন:

কলেজ কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবেদনটি হলো, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কলেজে কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করার অনুমতি চাওয়া। এই আবেদন সম্ভবত ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

সব মিলিয়ে, সাউথ কলকাতা ল কলেজের এই আবেদন এবং হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা, autonomia এবং ছাত্র রাজনীতির ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আগামী ২৪শে জুলাই রাজ্যের পক্ষ থেকে কী জবাব আসে এবং আদালত এই বিষয়ে চূড়ান্ত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপরই নির্ভর করছে দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের ভবিষ্যতের চিত্র।