আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ১৮ দিনের এক ঐতিহাসিক মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করে দেশে ফিরেছেন ভারতীয় নভোচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটে অ্যাক্সিওম ৪ মিশনের অংশ হিসেবে গত ২৫শে জুন নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং ২৬শে জুন তিনি আইএসএস-এ পৌঁছান। আর সেই দিনই ঘটেছিল এক অভিনব ঘটনা, যা মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মহাকাশ থেকে তিনি সরাসরি ভিডিও কল করেছিলেন তাঁর স্ত্রী কামনা শুক্লাকে।

মহাকাশ থেকে প্রথম ভারতীয় নারীর কাছে ফোন:
এই কলের মাধ্যমেই ইতিহাস তৈরি হয়, কারণ কামনা শুক্লা হয়ে ওঠেন প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি সরাসরি মহাকাশ স্টেশন থেকে তাঁর স্বামীর ফোনকল পান। এই মুহূর্তটি মহাকাশ ও পৃথিবীর ভালোবাসাকে এক নতুন সূত্রে বেঁধে দেয়। কলের সময় শুভাংশু তাঁর দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতা, আইএসএস-এ চলমান বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মহাকাশ থেকে দেখা পৃথিবীর অপূর্ব দৃশ্য সম্পর্কে কামনার সঙ্গে কথা বলেন। কামনা শুক্লা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “ওর কণ্ঠ শুনে আর নিরাপদে আছে জেনে আমার মনটা ভরে গিয়েছিল।”

পরিবারের পুনর্মিলন ও আবেগের মুহূর্ত:
মিশনের সময় থেকেই কামনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। স্বামীর মিশন শেষের পর পৃথিবীতে ফেরার জন্য তিনি আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। শুভাংশুর পছন্দের খাবার রান্না করা থেকে শুরু করে তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সব রকম বন্দোবস্ত তিনি করে রেখেছিলেন। দীর্ঘ দুই মাসের প্রয়োজনীয় কোয়ারেন্টাইন শেষে ১৬ই জুলাই হিউস্টনে স্ত্রী কামনা ও ছয় বছরের ছেলে কিয়াশের সঙ্গে শুভাংশু দেখা করেন। এই সাক্ষাতের মুহূর্তে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “মহাকাশ ভ্রমণ অসাধারণ, কিন্তু দীর্ঘদিন পর পরিবারের মুখ দেখা আরও বড় আনন্দ।”

দীর্ঘদিনের প্রেম ও বৈজ্ঞানিক অবদান:
শুভাংশু এবং কামনার বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। লখনউয়ের সিটি মন্টেসরি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে তাঁদের বন্ধুত্বের শুরু। কামনা পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক।

১৯৮৪ সালের রাকেশ শর্মার পর শুভাংশু হলেন দ্বিতীয় ভারতীয় যিনি মহাকাশে গিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তাঁর এই ১৮ দিনের মিশনে তিনি ৬০টিরও বেশি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে মেথি ও মুগ ডাল চাষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলি ভারতের মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

এই ঐতিহাসিক যাত্রায় কামনা শুক্লার সেই অবিস্মরণীয় ভিডিও কল একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা মহাকাশ অভিযানের কঠোরতার পাশাপাশি মানবিক সম্পর্কের গভীরতাকেও তুলে ধরেছে। এটি শুধুমাত্র এক নভোচারীর ব্যক্তিগত মুহূর্ত নয়, বরং এটি ভারত ও মহাকাশ গবেষণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।