বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ বুধবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)-র ‘জুলাই পদযাত্রা’ চলাকালীন এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। পুলিশের গাড়িতে আগুন, দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই ঘটনায় কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নিহতদের সংখ্যা ‘প্রথম আলো’র মতে তিনজন হলেও, ‘কালের কণ্ঠ’ মৃতের সংখ্যা ৪ বলে জানিয়েছে।

এনসিপির অভিযোগ, এই হামলা সরাসরি ক্ষমতাসীন আওয়ামি লীগ সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এমনকি পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে, এবং পুলিশ আদালত চত্বরেও প্রবেশ করে।

গোপালগঞ্জের সরকারি হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, তিনজন নিহত হয়েছেন, যাদের নাম দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী এবং সোহেল মোল্লা। গোপালগঞ্জ হাসপাতালের সুপার জীবীতেশ বিশ্বাস ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন যে, মৃতদেহগুলি হাসপাতালে আনার আগেই তারা প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং তাদের শরীরে বুলেটের ক্ষত ছিল। হাসপাতাল সূত্র আরও জানিয়েছে, এই ঘটনায় অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই হতাহতের খবর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি সভা হওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে সভাস্থলে হাজির হয়। হামলাকারীরা মঞ্চে ভাঙচুর চালায় এবং ব্যানার ছিঁড়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

তবে, কেবল সভাস্থলেই নয়, বুধবার সকাল থেকেই পুরো এলাকা উত্তপ্ত ছিল। সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের একটি গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় তিনজন পুলিশকর্মী আক্রান্ত হন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। সমাবেশমঞ্চে এনসিপির স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় খাল পার থেকে হঠাৎ করেই কয়েকশো লোক এসে হামলা চালায়। মুহূর্তের মধ্যেই এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এবং বোমাবাজিও করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১লা জুলাই থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশজুড়ে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে। দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই পদযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও, বুধবার গোপালগঞ্জে এই পদযাত্রা শুরু হতেই এমন ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটল। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।