‘ম্যায় হুঁ না!’ ১৮ জুলাই মোদীর সভার আগে দিলীপের তিরে কে? জানুন বিস্তারিত

পশ্চিমবঙ্গ: ২১শে জুলাই তৃণমূলের মঞ্চে দিলীপ ঘোষের সম্ভাব্য উপস্থিতি নিয়ে তৈরি হওয়া ধন্দ এখনও কাটেনি। কিন্তু তার তিন দিন আগেই দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভামঞ্চে তাঁর উপস্থিতির সম্ভাবনায় বঙ্গ বিজেপিতে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার পর দলের অন্দরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ‘বিবাহিত’ দিলীপ ঘোষ। তবে, নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের জমানা শুরু হওয়ার পরেও দিল্লি ফেরত দিলীপ রয়েছেন পুরোনো মেজাজেই, আর তাঁর ‘ম্যায় হুঁ না!’ স্লোগানই এখন আলোচনার কেন্দ্রে।

মঙ্গলবার দিলীপ ঘোষের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য – ‘ম্যায় হুঁ না!’ – অর্থাৎ, তিনি যে এখনও ময়দানে সক্রিয় আছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। নাম না করে দলের একাংশের নেতাদের নিয়মিত নিশানা করে চলেছেন এই পদ্ম-নেতা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই ইঙ্গিত সরাসরি শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারের দিকেই।

আগামী শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় তিনি যাবেন বলে আগাম জানিয়ে দিয়েছেন দিলীপ। এমনকি, যদি সভাস্থলে চেয়ার না জোটে, তবে কর্মীদের সঙ্গেই বসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর যে ট্যুর প্রোগ্রাম সামনে এসেছে, তাতে অন্ডাল বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথেই তাঁর দুর্গাপুরে সভাস্থলে যাওয়ার কথা। যদিও পূর্বে ঠিক ছিল, তিনি হেলিকপ্টারে যাবেন। দলীয় সূত্রে খবর, পরিবর্তিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুর্গাপুরে মোদীর একটি রোড-শো করারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, প্রধানমন্ত্রীর সভার আগে দলের অন্দরে দিলীপের এই মন্তব্যগুলি জল্পনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য যতই দলের ঐক্যবদ্ধ ছবি দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, দিলীপ ঘোষ নিজের মতোই রয়েছেন।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ ঘোষ কারো নাম না করে বলেন, “আমি কারও সার্টিফিকেট চাইনি। কাউকে ওড়াতেও চাই না। আমার আমলেই এঁরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের নিয়ে পার্টি কাজ করে এগিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দল তা হলে এখন এগোচ্ছে না কেন? সেই উত্তর খুঁজতে হবে।” দিলীপের সংযোজন, “দিলীপ ঘোষ তৈরি রয়েছে। রাস্তায় রয়েছে। কর্মীদের মাঝে রয়েছে। যে কাজ আমায় দেওয়া হয়েছিল, তা আমি করেছি। এখনও সুস্থ-সবল রয়েছি। দল যে ভাবে ব্যবহার করবে, সে রকম ভাবেই কাজ করব।” এর পরেই তাঁর সেই বিস্ফোরক মন্তব্য – ‘ম্যায় হুঁ না।’

দলে দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই দিলীপ একেবারে পুরোনো দিলীপ। যাঁর ধ্যান-জ্ঞানই হলো দল। মাঝের পর্বে সামান্য দূরত্ব বাড়লেও শমীক সেই দূরত্ব কমিয়েছেন। দিল্লিতে গিয়ে ‘চেয়ার না পাওয়া’ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করা দিলীপ এবার ফের প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছে।

একুশে জুলাইয়ের প্রসঙ্গ উঠলে তা এড়িয়ে না গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “একুশে জুলাই নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ তো প্রবল। সেটাই স্বাভাবিক। গুঞ্জন তো ছিলই। প্রত্যেকবারই থাকে। ডিম-ভাতের উৎসব হয়। কিন্তু আমি দেখলাম, এবার আমাদের পার্টির লোকেদেরও খুবই উৎসাহ ছিল (আমি কী করব, তা নিয়ে)। উৎসাহ তাঁদের মধ্যে ছিল, যাঁরা ওখানে ডিম ভাত খেয়ে এসেছেন। আমাদের বিজেপির (আদি বিজেপি) লোকেদের কোনও সমস্যা নেই এই নিয়ে।”

দিলীপ ঘোষের এই একের পর এক মন্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে তাঁর উপস্থিতির সম্ভাবনা, বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে কী পরিবর্তন আনবে, তা এখন দেখার বিষয়।