আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে দেশজুড়ে ‘মোর দ্যান ইমার্জেন্সি’র পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে—এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মতলার মঞ্চ থেকে তিনি জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লি গোপনে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে সন্দেহভাজন কাউকে এক মাস বিনা বিচারে আটকে রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, বিনা বিচারে কাউকে এভাবে জেলে রাখা যায় কি? তাঁর কথায়, “হোয়াট ইজ দিস? এ তো মোর দ্যান ইমার্জেন্সি!”

বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর লাগাতার হেনস্থা, থানায় আটকে রাখা, ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো এবং বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ তকমা লাগিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এরই প্রতিবাদে বুধবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক সুবিশাল মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

মিছিল শেষে ডোরিনা ক্রসিংয়ের জনসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে বাংলা স্বাধীনতার জন্ম দেয়, যে বাংলা নবজাগরণের জন্ম দেয়, যে বাংলা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দেয়, আজ সেই বাঙালির উপর অত্যাচার? এনআরসির নামে তাঁদের বাদ দেওয়া? ভোটের এক বছর আগে নোটিফিকেশন দিয়ে বলছে, যাঁকে সন্দেহ হবে বাংলা ভাষায় কথা বলে, জেলে এক মাস রেখে দিতে পারো। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই নোটিস পাঠিয়েছে। এরা ইন্দিরা গান্ধীকে গালাগালি দিয়ে সুপার ইমার্জেন্সি ডে পালন করে। যা হচ্ছে, এটা তো মোর দ্যান ইমার্জেন্সি। বেআইনি আটক।”

মমতা আরও জানান যে, তাঁদের কাছে খবর রয়েছে, এই নির্দেশের পর ইতিমধ্যেই হাজারখানেক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ লকআপে আছেন, কারও ঠাঁই হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। বাংলাদেশেও বহু মানুষকে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে বলেও এদিন সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি সোজাসুজি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, “আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলব। প্রয়োজনে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখো।”

হুঁশিয়ারির সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাকে বিরক্ত করলে আমি গোটা দেশে ঘুরব। আমাকে আটকাতে পারবেন না। দেখব কত ডিটেনশন ক্যাম্প আছে। ওখানে গিয়ে বাংলাতেই কথা বলব। সবার মাতৃভাষাকে সম্মান করতে হবে। বাংলাকে অসম্মান করলে চলবে না।” এদিন মঞ্চ থেকে আবারও ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেন মমতা, যা ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থা এবং দিল্লির ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র বিরুদ্ধে বড় কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত বহন করে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বিস্ফোরক মন্তব্যগুলি রাজ্য-রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে কেন্দ্রের এই ‘গোপন নোটিফিকেশন’ এবং বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদে তৃণমূলের আন্দোলন কোন পথে মোড় নেয়, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।