আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যা মামলা, সিবিআই তদন্তে ‘গাফিলতি’র অভিযোগ, ফের কাঠগড়ায় বিনীত গোয়েল

আরজি কর হাসপাতালের নার্স তিলোত্তমা রায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে তাদের ষষ্ঠ স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে। বুধবারের শুনানিতে সিবিআই জানিয়েছে, নতুন করে আরও সাতজন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে এবং আরজি কর হাসপাতালের ভিতরের ও বাইরের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তাঘাটেও তদন্ত চলছে বলে তারা জানিয়েছে।

সিবিআই তদন্তে প্রশ্ন: বিনীত গোয়েলের নাম
তবে এই শুনানিতে ফের একবার সিবিআই-এর তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিলোত্তমার পরিবারের তরফের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার বিনীত গোয়েলের নাম। এডুলজির অভিযোগ, সিবিআই ইচ্ছাকৃতভাবে বিনীত গোয়েলের দিকে নজর দিচ্ছে না, কারণ তিনি এবং মামলার তদন্তকারী অফিসার সম্পত মিনা একই ব্যাচের আইপিএস অফিসার। তাঁর দাবি, এই ‘ব্যাচমেট’ হওয়ার সুবাদেই নাকি বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতি করা হচ্ছে।

‘হাথরাস কাণ্ড’ টেনে তদন্তকারীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আরও উল্লেখ করেন যে, সম্পত মিনা এর আগে হাথরাস কাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন এবং সেই মামলাতেও তিনজন অভিযুক্ত খালাস পেয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা টেনে এনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বর্তমান তদন্তকারীর দক্ষতা নিয়েও সন্দেহ থাকছে। তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে কিনা তা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সিবিআইয়ের পাল্টা জবাব: ‘তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত’
পরিবারের আইনজীবীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই-এর আইনজীবীরা কড়া ভাষায় জবাব দেন। তাঁরা বলেন, “কে কার ব্যাচমেট, তা দিয়ে তদন্ত নির্ধারিত হয় না। আমরা তথ্য প্রমাণ দেখে পদক্ষেপ নিই। আপনাদের কথায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।” তাঁরা আরও জানান যে, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণ মেলেনি, সেই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি।

সিবিআই দাবি করেছে, ঘটনার সময় হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। কে কখন ভিতরে ঢুকেছে বা বেরিয়ে গিয়েছে, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থল থেকে একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় দাসের ডিএনএ মিলেছে, আর কোনো ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া যায়নি বলেও তারা জানায়। অভিযুক্তের সঙ্গে সব প্রমাণ মিলে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও চারজন ব্যক্তির লাই ডিটেকশন টেস্টও করানো হয়েছে, যাতে সত্যতা যাচাই করা যায়।

আদালতের নির্দেশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
তবে পরিবারের তরফে ওঠা প্রশ্নগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সিবিআই-এর আইনজীবীরা আরও বলেন, “আমরা নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করব না। আমরা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করেছি। আমরা কারও থেকে ভয় পাই না।”

এই মামলায় নতুন করে যে সাতজন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, তারা তদন্তে কতটা প্রভাব ফেলবে, এখন সেটাই দেখার। পাশাপাশি, সিবিআই-এর তদন্তের উপর পরিবারের প্রশ্ন এবং প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের নাম যেভাবে উঠে এসেছে, তা আইনজগতে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগ্রহে অপেক্ষা করছে তিলোত্তমার পরিবারসহ রাজ্যের বিশিষ্ট মহল। এই মামলায় ন্যায়বিচার আদৌ হবে কি না, সেই প্রশ্ন আবারও ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।