“বাঙালির উপর এত রাগ কেন?”-ধর্মতলার মোড় থেকে বিজেপিকে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতার

বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর লাগাতার হেনস্থার অভিযোগের প্রতিবাদে বুধবার কলকাতার রাজপথে নেমে এল তৃণমূল কংগ্রেস। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোরিনা ক্রসিংয়ে আয়োজিত সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করে বাঙালিদের হেনস্থার তীব্র নিন্দা করেন এবং আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

গত কয়েক দিন ধরে অসম, দিল্লি, ওড়িশা, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র সহ একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে “বাংলাদেশি” তকমা দিয়ে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি যথাযথ কাগজপত্র দেখালেও অনেককে আটক করে জেলে পাঠানোর খবরও সামনে এসেছে। এই ঘটনাগুলি রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে বলেন, “আমাদের রাজ্যে প্রায় দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক সম্মানের সঙ্গে কাজ করেন। অথচ, আমাদের ২২ লক্ষ শ্রমিক ভিন রাজ্যে গিয়ে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এটা কীভাবে চলতে পারে?” তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, বাঙালি এবং বাংলা ভাষার ওপর যেকোনো আঘাত এলে বাংলার সরকার কোনোভাবেই চুপ থাকবে না।

মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “বাঙালির উপর এত রাগ কেন? কী করেছে বাঙালি?” তিনি উল্লেখ করেন যে, ওড়িশায় সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাংলা থেকে বিদ্যুৎ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা গিয়ে কাজ করেন, বাংলা থেকে কৃষক ও পর্যটকরাও যান। এমন পরিস্থিতিতে শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য যদি তাদের আটক করা হয়, তবে এর ফল আগামী দিনে বাংলা বুঝে নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

প্রতিবাদের ঝাঁঝ এবার কেবল বাংলাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা সহ বিভিন্ন রাজ্যেও এই প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়বে। চ্যালেঞ্জের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের খাটো করে দেখবেন না। আমরা কী করতে পারি, না পারি, আপনারা জানেন না। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করেছিলেন, অভিষেকরা ধর্না দিয়ে কী করেছিল সেটা জানেন।”

মমতা আরও প্রশ্ন তোলেন, বাংলা যখন প্রতিটি ভাষাকে সম্মান করে, তখন বাংলা কি ভারতের অংশ নয়? কেন ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে শুধুমাত্র বাংলা বলার অপরাধে হেনস্থার শিকার হতে হবে? এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিজেপি সরকারের বিভাজনের রাজনীতি এবং বাংলা ভাষার প্রতি তাদের বিদ্বেষ আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ করেন। এই প্রতিবাদ মিছিল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা, জাতীয় রাজনীতিতে ভাষাভিত্তিক বিভাজন এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিল।