উবার চালকের মানবিক মুখ, গভীর রাতে বিপদ থেকে বাঁচালেন তরুণীকে

ব্যস্ত দিনের শেষে অফিস থেকে ফেরার পথে এক দিল্লির তরুণী গভীর রাতে এক অভাবনীয় মানবিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন। উবার যাত্রার সেই হৃদয়স্পর্শী ঘটনা তিনি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করতেই তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়, এবং নেটিজেনরা উবার চালকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। মূল গন্তব্যের বদলে ভুল ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়ার পর, সেই উবার চালক যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সমাজের অন্ধকার দিকটিতেও আশার আলো দেখিয়েছে।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কাজ শেষে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই যুবতী বাড়ি ফেরার জন্য একটি ক্যাব বুক করেন। কিন্তু যাত্রার শুরুতেই তিনি বুঝতে পারেন, তাড়াহুড়ো করে তিনি বাড়ির ঠিকানার বদলে অফিসের ঠিকানা দিয়ে ফেলেছেন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে তাড়াহুড়োতেই এই ভুল হয়েছিল। ড্রাইভারকে যখন তিনি ঠিকানা পরিবর্তনের কথা জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি জানান যে গাড়ির লোকেশন অনুযায়ী বিপরীত দিকে হওয়ায় তিনি ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন না এবং যুবতীকে নতুন ক্যাব বুক করার পরামর্শ দেন।

জানা যায়, যুবতী তখন মূল রাস্তা থেকে দূরে, নির্জন ও কম আলো ঝলমলে এক জায়গায় আটকে পড়েছিলেন। পরিস্থিতি তাঁর কাছে বেশ ভীতিকর এবং অনিরাপদ মনে হচ্ছিল। তাঁর এই অস্বস্তি লক্ষ্য করে উবার চালক সদয় ভঙ্গিতে বলেন, “ম্যাম আপ দুসরি ক্যাব করলো অউর জব তক না হো আপ কার ম্যায় হি বৈঠে রহো। অ্যায়সে রাত ম্যায় রোড পে কাহা আপ আকেলে খাদে রহোগে। আচ্ছা নেই লাগে অ্যায়সে।” (ম্যাডাম, আপনি অন্য ক্যাব বুক করুন, আর যতক্ষণ না আসছে, আপনি গাড়ির ভেতরেই থাকুন। এমন রাতে রাস্তায় আপনি একা কেন দাঁড়িয়ে থাকবেন? এটা ভালো দেখায় না।) ড্রাইভারের এই সহানুভূতিশীল মন্তব্যে যুবতী তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ এবং আশ্বস্ত অনুভব করেন। অন্ধকার রাস্তায় তাঁকে একা অপেক্ষা করতে না দিয়ে, নিজের গাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার এই মানবিকতা সবার নজর কেড়েছে।

নেটদুনিয়ায় প্রশংসার ঝড় ও মানবিকতার উদাহরণ:

এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতে শুরু করেন। একজন ব্যবহারকারী নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে লেখেন, “আমি একবার আমার দিদিমার জন্য একটি ক্যাব বুক করেছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি অসুস্থ হয়ে গাড়িতেই বমি করেন। ক্যাবওয়ালা তাঁকে দায়িত্ব নিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন। এর জন্য আমাদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেননি।”

আরেকজন মহিলা ব্যবহারকারী দিল্লির একাকী মহিলা হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন: “দিল্লিতে একা থাকা এক মহিলা হিসেবে, আমি অবশ্যই বলব যে উবার ড্রাইভারদের সঙ্গে আমারও বেশিরভাগ সময়ই ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে।”

একজন মুগ্ধ ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “আমাদের দেশে তার মতো আরও অনেকের প্রয়োজন।” আরেকজন লিখেছেন, “কখনও কখনও বড় কিছু নয়, কেবল মানবিকতার ছোট ছোট মুহূর্তগুলিই আপনার সঙ্গে থাকে। আমি খুশি যে তিনি আপনার যত্ন নিয়েছেন। সত্যি বলতে, তার মতো ড্রাইভাররা সব ভালো জিনিসের যোগ্য। এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় মানবিকতা এখনও আছে।”

দিল্লিতে প্রথমবার বেড়াতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন আরও এক ব্যক্তি। তীব্র শীতের রাতে রাত ১টা নাগাদ ট্রেন থেকে নেমেছিলেন। স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় ছিল, আর সেই খারাপ অবস্থার মধ্যে একটি ক্যাব বুক করেন। সেই ক্যাবের ড্রাইভারও অত্যন্ত সহৃদয় আচরণ করে নিরাপদে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

এই ঘটনাগুলি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির এই যুগেও মানবতা এবং সহানুভূতি কতটা অপরিহার্য। উবার চালকের এই দায়িত্বশীল এবং মানবিক আচরণ নিঃসন্দেহে সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।