উপেন্দ্রকিশোরের পৈত্রিক ভিটে ভাঙায় ক্ষোভ, কড়া বার্তা অভিষেক ব্যানার্জীর

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের পৈত্রিক বাড়ি ভেঙে ফেলার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই সুরেই তীব্র প্রতিবাদ জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই সিদ্ধান্তকে বাঙালির আবেগ ও বিবেকের উপর আঘাত বলে অভিহিত করেছেন এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলা শিশু সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। তাঁর সৃষ্ট ‘টোপর’, ‘ছেলেদের রামায়ণ’, কিংবা ‘সন্দেশ’ পত্রিকার মাধ্যমে তিনি কেবল শিশু সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেননি, বরং গোটা বাঙালি সংস্কৃতির মেরুদণ্ড গড়ে তুলেছিলেন। এই মনীষী, চিত্রশিল্পী, সংগীতকার, মুদ্রণবিশারদ এবং প্রকাশকের পাশাপাশি তাঁর পুত্র সুকুমার রায় এবং নাতি সত্যজিৎ রায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। এই রায় পরিবারের শিকড় বাংলাদেশের ময়মনসিংহেই। স্থানীয়দের কাছে উপেন্দ্রকিশোরের পৈত্রিক ভিটে আজও ‘রায় বাড়ি’ নামে পরিচিত। অথচ সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি গুঁড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার প্রশাসন।

বুধবার এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত শুধু একটি স্থাপত্য ধ্বংস নয়, এটি বাঙালির আবেগ ও বিবেকের উপর আঘাত। এটি শিল্প-সংস্কৃতিতে রায় পরিবারের অতুলনীয় অবদানের প্রতি চরম অবজ্ঞা।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। আমি বাংলাদেশ সরকারকে এই কঠোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং দাবি করছি, এই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনটি যেন রক্ষা ও সংরক্ষণ করা হয়।”

অভিষেক এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে ভারত সরকারকে কূটনৈতিক স্তরে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “এই বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনায় বসা। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আবেগকে মান্যতা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, বরং তাকে সংরক্ষণ করাই সভ্য সমাজের চিহ্ন।”

তৃণমূল শিবিরের পাশাপাশি বাংলা ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বিশ্বজোড়া স্বীকৃত রায় পরিবারের অবদান যেখানে আন্তর্জাতিক পরিসরেও গর্বের বিষয়, সেখানে তাঁদের শিকড়কে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত কি রাজনৈতিক নাকি নিছক উদাসীনতা? একাংশ মনে করছে, রায় পরিবারের স্মৃতি রক্ষার দাবি কেবল আবেগ নয়, এটা ঐতিহ্য রক্ষারও প্রশ্ন। ঐতিহাসিক এবং সংস্কৃতিকর্মীদের মতে, এই বাড়ি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও মজবুত হতো।

বাংলাদেশের সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধু বাঙালির আবেগে নয়, একটি বৃহৎ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় আঘাত হেনেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যেখানে বিশ্বের বহু দেশ ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষকেও যত্নে সংরক্ষণ করছে, সেখানে উপেন্দ্রকিশোরের মতো মনীষীর স্মৃতি ভাঙা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রতিক্রিয়া রাজনীতিতেও নতুন মাত্রা দিয়েছে। এখন দেখার, বিষয়টি কতদূর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আলোচনার পরিসরে প্রবেশ করে।