পার্ক সার্কাসে সাংবাদিকের উপর আকস্মিক ‘ব্লেড’ হামলা, শহরের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন

শহরের অন্যতম ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকা পার্ক সার্কাস স্টেশনের সামনেই ঘটল এক রোমহর্ষক ঘটনা। মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কিশলয় মুখার্জী। স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এক দুষ্কৃতী আচমকা তাঁর উপর চড়াও হয়ে ধারালো ব্লেড দিয়ে তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে এলোপাথাড়ি কোপ মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় কিশলয়কে তড়িঘড়ি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং কলকাতার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ফের একবার বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ: আকস্মিক হামলা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক কিশলয় মুখার্জী প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবার রাতে ওই সময়ে স্টেশনের আশেপাশে ছিলেন। আচমকা এক যুবক তাঁর দিকে এগিয়ে এসে অশালীনভাবে কথা বলতে শুরু করে। কিশলয় এর প্রতিবাদ করতেই দুষ্কৃতীটি ব্লেড বের করে অতর্কিতে হামলা চালায়। চোখের পলকেই তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষত তৈরি হয় এবং তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় জনগণ ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতাল সূত্রে খবর: স্থিতিশীল হলেও ক্ষত গুরুতর
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, কিশলয়ের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও তাঁর হাতে ও ঘাড়ে বেশ গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, কোপের গভীরতা মারাত্মক ছিল এবং সামান্য এদিক-ওদিক হলে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারত।

পুলিশি তদন্ত ও গণমাধ্যম মহলে উদ্বেগ
এই ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পার্ক সার্কাস থানা ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ সূত্রে প্রাথমিকভাবে এটিকে কোনো পূর্বপরিকল্পিত হামলা বলে মনে করা হচ্ছে না, তবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীর মানসিক অবস্থাও পুলিশের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

কলকাতা প্রেস ক্লাব এবং অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলি এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। তাঁরা অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। প্রেস ক্লাবের সভাপতি এক বিবৃতিতে বলেন, “একজন সাংবাদিকের উপর এমন হামলা গণতন্ত্রে চরম লজ্জার বিষয়। পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।”

সাংবাদিক কিশলয়ের সহকর্মীরাও এই ঘটনায় আতঙ্কিত। তাঁরা বলছেন, “শহরের বুকে এমন নিরাপত্তাহীনতা সত্যিই উদ্বেগজনক। সাংবাদিকেরা নানা জায়গায় রিপোর্টিং করতে যান, কিন্তু যদি নিজের শহরেই নিরাপদ না হন, তবে এটা ভয়ের বার্তা দেয়।”

এই ঘটনার ফলে কলকাতার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। প্রশাসনের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, দ্রুত দোষীদের ধরে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং জনমনে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।