২১শে জুলাই শহিদ সমাবেশ! শক্তিগড়ে দু’দিনের ‘ল্যাংচা মেলা’র অভিনব উদ্যোগ

আগামী ২১শে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর শক্তিগড়ের জাতীয় সড়কে যে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, তা নিরসনে এবার এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধর্মতলা থেকে ফেরার পথে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা শক্তিগড়ে গাড়ি থামিয়ে ঐতিহ্যবাহী ল্যাংচা কেনার জন্য ভিড় করেন, যা ব্যাপক যানজটের কারণ হয়। এই সমস্যা মেটাতে, ২১শে জুলাইয়ের জনসভার ঠিক আগে ২০ ও ২১শে জুলাই শক্তিগড়ে দু’দিনব্যাপী ‘ল্যাংচা মেলা’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই প্রায় ৪২ বিঘা জায়গার উপর এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

মেলায় কী কী থাকছে?
জেলা পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মেলার জন্য নির্ধারিত ৪২ বিঘা জায়গায় পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা যানজট কমাতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, কর্মী-সমর্থকদের সুবিধার্থে বাথরুম এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।

কেন এই উদ্যোগ? অতীতের অভিজ্ঞতা ও অভিযোগ
প্রতি বছর ২১শে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে ধর্মতলায় শহিদ সমাবেশে যোগ দিতে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া-সহ দুই বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকার কর্মী-সমর্থকরা শক্তিগড় সংলগ্ন জাতীয় সড়ক ব্যবহার করেন। ফলে যাতায়াতের পথে শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাবের একাধিক দোকানে মানুষের তিল ধারণের জায়গা থাকে না।

গত বছর ২১শে জুলাইয়ের আগে ল্যাংচার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল খোদ রাজ্যের খাদ্য দফতর। সেই সময় শক্তিগড়ের বিভিন্ন ল্যাংচার দোকানে অভিযান চালিয়ে প্রায় তিন কুইন্টাল নষ্ট হয়ে যাওয়া ল্যাংচা মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল প্রশাসন। এই ঘটনায় ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, ২১শে জুলাইয়ের বিপুল চাহিদার কারণে অনেক দোকানদার পনেরো দিন বা এক মাস আগে থেকেই ল্যাংচা ভাজার কাজ শুরু করে দেন। যে কিচেনগুলোতে ল্যাংচা ভাজা হয়, সেগুলোর পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর এবং সেখানে আরশোলা, পোকামাকড় ও মাছি ভনভন করতে দেখা যায়। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা দীর্ঘদিন ধরে ভেজে রাখা বেশিরভাগ ল্যাংচাতেই ফাঙ্গাস দেখতে পেয়েছিলেন।

বিধায়ক ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
এবার ব্যবসায়ীদের যাতে অসুবিধা না-হয় এবং সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ল্যাংচার স্বাদ নিতে পারেন, সে কথা ভেবেই ল্যাংচা মেলার উদ্যোগ নিয়েছেন বর্ধমান উত্তর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক। তিনি বলেন, “শক্তিগড়ের ল্যাংচা বিখ্যাত। প্রতি বছর ২১শে জুলাই ধর্মতলা থেকে ফেরার পথে শক্তিগড় সংলগ্ন জাতীয় সড়কে যানজট হয়। ভিন জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ফেরার সময় শক্তিগড়ের ল্যাংচা খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে জেলা পুলিশ ও ব্যবসায়ীরা আলোচনা করে দু’দিন ব্যাপী শক্তিগড়ে ল্যাংচা মেলার আয়োজন করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “শক্তিগড়ে প্রায় ৫৫টি ল্যাংচার দোকান আছে। তারা প্রত্যেকেই এই মেলাতে স্টল দিতে পারবে। এতে যানজট এড়িয়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি পার্কিং করার পাশাপাশি শক্তিগড়ের ল্যাংচার স্বাদ তাঁরা নিতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ জায়গা পরিদর্শন করে গিয়েছে। থাকবে পর্যাপ্ত বাথরুম ও মেডিক্যাল ব্যবস্থা।”

ল্যাংচা বিক্রেতা শেখ জাভেদ ইসলাম এই উদ্যোগে অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন, “আমরা ১৭ বছর ধরে এখানে ল্যাংচার ব্যবসা করছি। একাধিকবার ধর্মতলার জনসভা দেখেছি। ফলে ভিড় কেমন হয়, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের যে ল্যাংচা মেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা খুব খুশি। কারণ এতে একদিকে আমাদের যেমন ব্যবসা ভালো হবে, তেমনি রাস্তায় যানজট কমবে। ওইদিন বিকেল তিনটে থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত যানজটে মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।”

প্রশাসনের এই দূরদর্শী পদক্ষেপ একদিকে যেমন স্থানীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি ল্যাংচা ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে, তেমনি ২১শে জুলাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে জাতীয় সড়কে যানজট কমিয়ে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি লাঘব করবে বলে আশা করা হচ্ছে।