কেন রোজ দুপুর ১২টা ও রাত ১২টায় বন্ধ থাকে হাওড়া ব্রিজ? জেনে নিন সত্যিটা!

প্রায় ৮২ বছর আগে ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা খরচ করে নির্মিত হয়েছিল যে হাওড়া ব্রিজ, তা কেবল ভারতের অন্যতম আইকনিক কাঠামোই নয়, পৃথিবীর ষষ্ঠ দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার সেতুও বটে। এই সেতু ঘিরে যেমন বহু কিংবদন্তি প্রচলিত, তেমনই এর কিছু বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যও চমকপ্রদ।
তাপমাত্রায় বৃদ্ধি ও হাওয়ায় বাঁকা:
হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, হাওড়া ব্রিজের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো দিনের বেলায় সূর্যের আলোর তেজে এটি প্রায় ৪.৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাপমাত্রার প্রভাবে ধাতব কাঠামোর প্রসারণের এটি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়াও, প্রবল হাওয়ার দাপটে এই ব্রিজ কিছুটা বেঁকেও যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর স্থিতিস্থাপকতা ও ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
দুপুর ১২টায় বন্ধের গুজব: সত্যতা কতটুকু?
হাওড়া ব্রিজ সম্পর্কে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, এটি নাকি প্রতিদিন দুপুর ১২টা এবং রাত ১২টায় কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এই আশঙ্কায় যে, এই সময়ে এটি ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু তথ্য বলছে, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। হাওড়া ব্রিজ প্রতিদিন দুপুর বা রাতে ১২টায় বন্ধ হয় না।
বাস্তব রক্ষণাবেক্ষণ:
তবে, হাওড়া ব্রিজ যে একেবারেই বন্ধ হয় না, তা কিন্তু নয়। তথ্য অনুযায়ী, প্রতি শনিবার রাত ১১টা ৩০ মিনিট থেকে রবিবার ভোর ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই সেতু বন্ধ রাখা হয়। এই সময়ে ইঞ্জিনিয়াররা ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। এর বাইরে হাওড়া ব্রিজ বন্ধ হওয়ার কোনো বাস্তব খবর নেই।
নিয়মিত পরিচর্যা:
কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট নিয়মিতভাবে হাওড়া ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে। প্রতি ছয় থেকে সাত বছর অন্তর এই ব্রিজে নতুন করে রঙ করা হয়। এছাড়াও, ব্রিজের উপর পাখির মল-মূত্র পরিষ্কার করার কাজও নিয়মিত চলে। এই সমস্ত পরিচর্যার মাধ্যমেই দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোটি সচল ও সুরক্ষিত রাখা হয়।
সুতরাং, হাওড়া ব্রিজকে ঘিরে প্রচলিত অনেক গল্পের মতো দুপুর ১২টায় বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিছকই একটি গুজব। এর প্রকৃত বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণই একে দীর্ঘজীবী রেখেছে।