কেন বিমানে ককপিট ভিডিও রেকর্ডার থাকে না? আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর উঠছে নানা প্রশ্ন

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে বিমানের দুটি ইঞ্জিনেরই জ্বালানি একসঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফ্লাইট অডিও রেকর্ডারে ধরা পড়া শেষ মুহূর্তের দুই পাইলটের উদ্বিগ্ন কথোপকথন এই সন্দেহেরই জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এই অডিও রেকর্ডারই এখন নতুন এক দাবির জন্ম দিয়েছে: কেন বিমানে ককপিট ভিডিও রেকর্ডার (CVR) থাকে না? কেন কেবল অডিও রেকর্ডের ওপর নির্ভর করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে, যেখানে ভিডিও ফুটেজ আরও স্পষ্টভাবে ঘটনার ওপর আলোকপাত করতে পারে?

‘ককপিট ভিডিও’র দাবি কেন?

বিমান দুর্ঘটনায় ককপিট ভিডিওর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জোর দাবি উঠেছে। সাধারণ বিমানে অত্যন্ত সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও, ককপিটে কোনো ক্যামেরা থাকে না। এর ফলে ভবিষ্যতে ভয়ংকর দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান আরও কঠিন হয়ে পড়ে। যদি ককপিটে একটি ভিডিও রেকর্ডার থাকত, তাহলে পাইলটদের শেষ মুহূর্তের শারীরিক প্রতিক্রিয়া, ককপিটের ভেতরের পরিস্থিতি এবং কোন সুইচ কখন কাজ করেছে বা করেনি, তা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যেত।

ভিডিও রেকর্ডার স্থাপন কি সম্ভব?

ককপিটে ভিডিও রেকর্ডার বসানো বাস্তবিকই সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে। কারণ বেশিরভাগ বিমানই পুরনো মডেলের, যেখানে যন্ত্রপাতির অবস্থান এমন যে ক্যামেরা বসানো খুব সহজ নয়। তবে নতুন প্রজন্মের বিমানে এই কাজটি কঠিন নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাইলটদের আপত্তি কেন?

আশ্চর্যের বিষয় হলো, ককপিটে ভিডিও রেকর্ডার বসানোর ক্ষেত্রে পাইলটদের পক্ষ থেকে অনীহা দেখা যায়। তাঁদের মূল দাবি হলো, এতে তাঁদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে। ককপিটে তাঁদের নিজস্ব মতো করে থাকার স্বাধীনতা বিঘ্নিত হবে বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, তাঁদের ভয়, উড়ান সংস্থাগুলি এই ক্যামেরার সুযোগ নিয়ে তাঁদের উপর অন্যায়ভাবে নজরদারি চালাতে পারে।

উদ্বেগজনক প্রাথমিক রিপোর্ট:

প্রসঙ্গত, বিমান দুর্ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা ‘এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ (AAIB) এই দুর্ঘটনার প্রাথমিক ১৫ পাতার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে দুই পাইলটের হাড়হিম করা কথোপকথন প্রকাশ্যে এসেছে। বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে (CVR) পাওয়া এই কথোপকথন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে এক পাইলট অন্য পাইলটকে প্রশ্ন করেন, “জ্বালানি বন্ধ করে দিলে কেন?” উত্তরে অপর পাইলট বলেন, “আমি কিছু বন্ধ করিনি।” এই অডিও রেকর্ডটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ককপিট ভিডিও থাকলে এই রহস্যের জট আরও দ্রুত খুলত বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এই ঘটনা আবারও আধুনিক বিমানে ককপিট ভিডিও রেকর্ডারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।