মনসুর ফকিরের বাদ্যযন্ত্রের নেপথ্যে শান্তিপুরের তুহিন চক্রবর্তী,নদিয়ার এই যুবককে চিনছে গোটা বিশ্ব

বিশ্বজুড়ে সমাদৃত বাউল শিল্পী মনসুর ফকিরের সম্প্রতি এক মন্তব্যে উঠে এসেছে নদীয়ার শান্তিপুরের এক অসামান্য প্রতিভার কথা। মনসুর ফকির জানিয়েছিলেন, বর্তমানে তিনি যে বাদ্যযন্ত্রটি ব্যবহার করছেন, তা শান্তিপুরের তার এক শিষ্যের তৈরি এবং ভবিষ্যতেও তিনি সেটি দিয়েই গান গেয়ে যাবেন। এই কথা শুনেই আবেগে আপ্লুত হয়েছেন সেই বাদ্যযন্ত্র শিল্পী, তুহিন চক্রবর্তী।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তুহিন: পড়াশোনা থেকে অ্যাডভেঞ্চার
তুহিন চক্রবর্তী কেবল একজন বাদ্যযন্ত্র শিল্পী নন, তার জীবন পথচলায় রয়েছে বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি কলা বিভাগে পড়াশোনা করার পর এনসিসি-র মাধ্যমে অ্যারোনটিক বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করেছেন। এছাড়াও অ্যাডভেঞ্চার কোর্সের ওপর দিল্লিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে প্রতিনিধিত্ব করে তিনি বিজেতা হয়ে তৎকালীন রাজ্যপাল এম. কে. নারায়ণনের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর খড়গপুর আইআইটি-তে অ্যারো মডেলিং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবেও চাকরি করেছেন। এত কিছুর পরেও তার বরাবরই ইচ্ছে ছিল নিজের কিছু একটা ব্যবসা শুরু করার, আর তার পাশাপাশি ছিল সংগীতের প্রতি গভীর ঝোঁক।

প্যাশন থেকে পেশা: তারের বাদ্যযন্ত্রে উদ্ভাবন
নিজের এই প্যাশনকে অনুসরণ করেই তুহিন চক্রবর্তী নিজের বাড়িতেই একের পর এক বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে শুরু করেন। তবে তিনি মূলত তারের বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন, অর্থাৎ যে বাদ্যযন্ত্রগুলি তারের মাধ্যমে বাজানো হয়। তার তৈরি বাদ্যযন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো, তিনি শুধু চিরাচরিত তারের বাদ্যযন্ত্রই তৈরি করেন না, বরং শিল্পীর চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড (customized) বাদ্যযন্ত্রও তৈরি করেন। তার তৈরি সমস্ত বাদ্যযন্ত্র মেটাল স্ট্রিং (metal string) কিংবা ফাইবার স্ট্রিংয়ের (fiber string)।

লোকশিল্পীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ: সস্তা সরোদ
তুহিন চক্রবর্তীর তৈরি বাদ্যযন্ত্রের তালিকায় রয়েছে মনসুরি দোতারা, কৃষ্ণপ্রিয়া দোতারা, বড় কৃষ্ণপ্রিয়া দোতারা, বিভিন্ন ধরনের ম্যান্ডোলিন, এবং ‘ব্যানঝুঁকি’ নামে একটি আরবীয় বাদ্যযন্ত্র। এছাড়া, তিনি বর্তমানে ছোট আকারের সরোদও তৈরি করছেন। কারণ তিনি মনে করেন, সরোদ আকারে বেশ খানিকটা বড় হয় এবং যার দাম সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার কাছাকাছি হয়। কিন্তু একই বাদ্যযন্ত্র যদি একটু ছোট আকারে বানানো হয় এবং তার দাম অর্ধেক করা যায়, তাহলে বেশিরভাগ ফোক সংগীতশিল্পীরা তা কিনতে আগ্রহী হবেন। এই উদ্যোগ লোকশিল্পীদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের বাদ্যযন্ত্র পৌঁছে দেবে।

তুহিন চক্রবর্তী শুধু একজন দক্ষ কারিগরই নন, তিনি একজন উদ্ভাবক এবং লোকশিল্পের প্রতি তার ভালবাসা তাকে নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মনসুর ফকিরের মতো শিল্পীর প্রশংসা তার কাজের স্বীকৃতি এবং নদীয়ার এই প্রতিভাবান বাদ্যযন্ত্র শিল্পীর ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।